দক্ষিণ দিনাজপুরের ছৌ-নাচের কথা সবাই জানলেও সেভাবে কখনও প্রকাশ্যে আসেনি গম্ভীরা নৃত্যকলার কথা। চিরকালই প্রদীপের উল্টো দিকে থেকে যাওয়ার ফলে ক্রমশই বিলুপ্ত হওয়ার পথে বাংলার প্রাচীন এই লোকশিল্প। তবে অন্ধকারে হারিয়ে যেতে বসা এই নৃত্যকলাকে পুনরায় লোকচক্ষু ও আলোয় ফিরিয়ে আনতে এবার উদ্যোগী হয়েছে কাঁকুড়গাছি মিতালী সংঘ। এ বছর ৮৩ তম বর্ষে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার কুশমণ্ডি গ্রামের শিল্পীদের মতোই গম্ভীরা-মুখনাচ বা গম্ভীরা নাচে ব্যবহৃত মুখোশ পরেই ‘ছদ্মবেশ’-এ উমা আসছে উত্তর কলকাতার এই নামজাদা পুজোয়।
প্রসঙ্গত, মুখোশ নিয়েই বাঁচে দক্ষিণ দিনাজপুরের কুশমণ্ডি। মুখোশের আড়ালে নয়। মুখোশেই রূপ খোলে গম্ভীরা মুখনাচের। যে নাচে মুখোশই আদরের মুখ। গ্রামের বাসিন্দারা নিজেরাই তৈরি করেন কাঠের তৈরি বিভিন্ন দেব-দেবীর মুখোশ। বাদ যায় না নরসিংহ, রাক্ষস, বাঘ, কালী, চামুণ্ডারাও। সেই মুখোশেই উৎসব-যাপন গ্রামের মানুষের। এই গম্ভীরা মুখনাচের মুখোশকে কেন্দ্র করেই শিল্পী সিদ্ধার্থ বিশ্বাসের ভাবনা ও রূপায়নে কাঁকুড়গাছি মিতালীর থিম ‘ছদ্মবেশ’।
শিল্পীর সিদ্ধার্থ বিশ্বাসের কথায়, “আমাদের থিমের নাম ‘ছদ্মবেশ’। মূলত দক্ষিণ দিনাজপুরের কুশমন্ডি গ্রামে এই লোকশিল্পটি হয়। যেটি গম্ভীরা-মুখরাজ বলে বিখ্যাত। ওরা কাঠের ওপর এই মুখোশগুলি তৈরি করে। এবং ওই মুখোশটা পরে ওরা বিভিন্ন ধর্মানুষ্ঠান ও উৎসবে নৃত্য প্রদর্শন করে। মুখোশ পরে কীভাবে নাচ করা হয়, সেই মোটিফগুলোই মন্ডপে রাখা হবে। থার্মোকল দিয়েই মুখোশগুলি বানানো হচ্ছে। তারপর তাতে কাঠের এফেক্ট আনার চেষ্টা করছি।”
শিল্পী এ-ও জানিয়েছেন যে, ‘কীভাবে নৃত্যশিল্পীরা মুখোশ পড়ে এই শিল্প তুলে ধরেন তাও দেখতে পাবেন মণ্ডপে আগত দর্শনার্থীরা। কারণ কুশমন্ডি থেকেই ১২ জনের একটি দল আসছে, যাঁরা পুজোর কদিন এখানে লাইভ পারফরমেন্স করবে।’ জানা গেছে, ওয়ার্কশপ মিলিয়ে মোট ৩ মাস ধরে মন্ডপের কাজ চলছে। সঞ্জীববাবুর সহযোগী শিল্পী রয়েছেন ১০ জন। থিম রূপায়নে খরচ হচ্ছে মোট ১০ লক্ষ টাকা। মন্ডপের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সাবেকি প্রতিমা গড়ছেন কুমোরটুলির সনাতন পাল এবং থিম সঙ্গীতের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন মল্লার ঘোষ।