মোদী সরকারের দ্বিতীয় ইনিংস শুরুর দিনই কানাঘুষো শোনা গিয়েছিল যে এবার রেলের বেসরকারিকরণ করতে চলেছে মোদী সরকার। তারপরই সমস্ত জল্পনাকে সত্যি করে বাজেট পেশের দিনই স্পষ্ট হয়ে যায় যে, রেল এবং বিভিন্ন সরকারি সংস্থার বেসরকারিকরণের পথেই হাঁটতে চলেছে কেন্দ্র। ইতিমধ্যেই তা বাস্তবায়নের প্রথম ধাপ হিসেবে আইআরসিটিসিকে পরীক্ষামূলকভাবে তেজস এক্সপ্রেসের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এই উদ্যোগ ফলপ্রসূ হলে পরবর্তীতে আরও ১৫০টি ট্রেন তুলে দেওয়া হবে পুরোপুরি বেসরকারি হাতে। এবার ট্রেন চালানোর দায়িত্ব সরাসরি বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার পথে আরও এক ধাপ এগোল রেল মন্ত্রক। জানা গেছে, দূরপাল্লার পাশাপাশি ভাবনায় রয়েছে লোকাল ট্রেনও।
প্রাথমিক ভাবে হাওড়া-পুরী, হাওড়া-দিল্লী, হাওড়া-মুম্বইয়ের মতো দূরপাল্লার রুটের পাশাপাশি মুম্বই, কলকাতার লোকাল ট্রেন পরিষেবাকেও আংশিক ভাবে বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দিতে চাইছে রেল। হ্যাঁ, দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় এসেই যেমন জল মাপতে প্রথম ধাপে লখনউ-নয়াদিল্লী, মুম্বই-আমদাবাদ রুটে তেজসের মতো ট্রেন চালানো, এমনকী টিকিটের দাম ঠিক করার দায়িত্বও আইআরসিটিসির হাতে তুলে দিয়েছে মোদী সরকার। তেমনি পরবর্তী ধাপে আন্তঃশহর (ইন্টারসিটি) ১৪টি, দূরপাল্লার ১০টি ও শহরতলির চারটি লোকাল ট্রেন পরিষেবা বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার প্রাথমিক পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে রেল। আগামী শুক্রবার রেল মন্ত্রকে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেই বৈঠকে দক্ষিণ-পূর্ব রেল-সহ মোট ছ’টি জোনের প্রিন্সিপাল চিফ অপারেশনস ম্যানেজারকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।
রেল সূত্রে ইঙ্গিত, যদি ওই বৈঠকে কিছু ট্রেনকে বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়, তা হলে ওই সব ট্রেনের ভাড়া অনেকটাই বাড়াবে সংস্থাগুলি। পাশাপাশি সেগুলিতে রেলকর্মী বা প্রবীণদের ছাড়ও সম্ভবত মিলবে না। জোনগুলিকে বোর্ডের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, সরকারের একশো দিনের পরিকল্পনায় যাত্রীদের বিশ্বমানের পরিষেবা দিতে রেল পরিচালন ব্যবস্থা বেসরকারি হতে তুলে দেওয়ার প্রস্তাব নেওয়া হয়েছে। কারা ট্রেন চালাবে, তা দরপত্রের মাধ্যমে বেছে নেওয়া হবে। সংস্থাগুলিকে রুট নির্দিষ্ট করে দেওয়া হবে। সেই রুটে আধুনিক যাত্রিবাহী ট্রেন চালাতে হবে এবং বিনিময়ে রেলকে তার প্রাপ্য মেটাতে হবে সংস্থাগুলিকে। চিঠিতে এ-ও বলা হয়েছে যে, ওই ট্রেনগুলির ভাড়া নির্ধারণ করার অধিকার থাকবে সংশ্লিষ্ট সংস্থার হাতে।
এই পরিস্থিতিতে রেল ইউনিয়নগুলির আশঙ্কা, বেসরকারি হাতে গেলে একে তো রেলের ভাড়া বাড়বেই। উপরন্তু থাকবে কাজ হারানো আশঙ্কা। এ নিয়ে ক্ষোভ ছড়াচ্ছে রেলের অন্দরমহলে। রেলের একাংশের বক্তব্য, বেসরকারি হাতে চলে যাওয়া ট্রেনগুলিতে রেলের কর্মীরা কোনও ছাড় পাবেন না। আইআরসিটিসির হাতে থাকা দু’টি তেজসে প্রবীণ নাগরিক, শিশু বা রুগিরা ভাড়ায় ছাড় পান না। নয়া ট্রেনগুলিতেও একই অবস্থা হতে পারে বলে আশঙ্কা কর্মীদের। যদিও আত্মপক্ষ সমর্থনে রেল মন্ত্রকের যুক্তি, বর্তমানে যাত্রীখাতে প্রতি বছর গড়ে ৩০ থেকে ৩২ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয় তাদের। এই যুক্তি দেখিয়েই সাফাই, খাবার, ইন্টারনেট, টিকিট বিক্রির মতো একাধিক পরিষেবার পর ধাপে ধাপে এবার ট্রেন চালানোর গোটা দায়িত্বই ঝেড়ে ফেলতে চাইছে তারা।