বিরোধীদের সঙ্গে রাজনৈতিক ভাবে পেরে না উঠলেই বা বিরুদ্ধমত পোষণকারীদের পেছনে এজেন্সি লেলিয়ে দিচ্ছে কেন্দ্র- মোদী জমানার প্রথম থেকে বারবারই এই অভিযোগ তুলেছে বিরোধীরা। লোকসভা ভোট চলাকালীন ও ভোট পরবর্তী সময়ে এ নিয়ে বারংবার মোদী সরকারের বিরুদ্ধে তোপও দেগেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়নি। এবার সেই ধারা বজায় রইল কার্টুনিস্ট বিষ্ণু মাধবের ক্ষেত্রেও।
কেরলের বাসিন্দা তথা শান্তিনিকেতনের প্রাক্তনী বিষ্ণু মাধবের প্রায় প্রতিটি কার্টুনই এখন সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে বিখ্যাত। কেরলের শবরীমালা মন্দির থেকে বন্যা, রাজনীতি থেকে সিনেমা, ‘কারপেনসিলাসন’ নামক টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট করা বিষ্ণুর স্যাটায়ারধর্মী কার্টুনগুলিতে লাখ লাখ লাইক পড়ে। শেয়ারও হয় হাজার হাজার। তবে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহকে নিয়ে আঁকা কার্টুনের জেরে লাগাতার হুমকির মুখে পড়তে হচ্ছে শান্তিনিকেতনের প্রাক্তনী বিষ্ণুকে।
প্রসঙ্গত, কর্ণাটকের কংগ্রেস-জেডিএস সরকার পড়ে যাওয়ার পর একটি কার্টুন আঁকেন বিষ্ণু। ছবিতে দেখা যায়, একটি চেয়ারে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ বসে আছেন। আর তাঁর সামনে টেবিলের একপ্রান্তে রাখা হ্যান্ডকাফ আর অন্যপ্রান্তে রাখা পদ্মফুল। ওপরে লেখা, ‘এমন একটি প্রস্তাব যা আপনি অস্বীকার করতে পারবেন না’। এরপরেই বিজেপির আইটি সেল ও ‘ভক্ত’দের প্রবল আক্রমণের মুখে পড়েন কেরলের এই কার্টুনিস্ট। আসতে থাকে একের পর এক হুমকি।
তবে এই প্রথমবার নয়। ধর্ম, রাজনীতি, সমাজের অন্ধকার দিক নিয়ে বিষ্ণুর কার্টুন আগেও বিজেপির মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যার জেরে তাঁকে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেওয়ার মতো হুমকিও এসেছে। তবুও শিল্পকর্মে নিজের ভাবনা-চিন্তার প্রতিফলন ঘটাতে কাউকে পরোয়া করেননি বিষ্ণু মাধব। তাঁর কথায়, সমাজের আয়না হল তাঁর কার্টুন। কোনও স্বপ্ন দৃশ্য তিনি রচনা করেন না। যা কিছু বাস্তব, তা নিয়েই তাঁর কাজ। আর সে কারণেই সোশ্যাল মিডিয়ার কার্টুন প্রকাশের মাধ্যমে নিজের ভাবনা-চিন্তার বহিঃপ্রকাশ ঘটান তিনি।
তবে কারোর বিশ্বাস বা ভাবনা-চিন্তার সঙ্গে না মিললে যে বিতর্ক হতেই পারে, সে কথাও মানছেন বিষ্ণু। আর সেই কারণেই কার্টুনের জন্য ব্যক্তিগত স্তরে কুরুচিকর আক্রমণ শুরু হলে তা এড়িয়ে যাওয়াই শ্রেয় বলে মনে করেন তিনি। উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় এজেন্সি দিয়ে বিরোধী নেতাদের ভয় দেখিয়ে তাঁদের গেরুয়া শিবিরে টানার যে অভিযোগ করছেন দেশের বিরোধীরা, এই প্রেক্ষিতে বিষ্ণু মাধবের কার্টুন যে সেই দাবিকেই আরও জোরালো করে তুলল, তা বলাই বাহুল্য।