গত ৫ আগস্ট সংসদে ৩৭০ ধারা বাতিল করে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা খারিজের ঘোষণা করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সংখ্যাগরিষ্ঠতার বলে বিল পাশ করিয়ে কাশ্মীর থেকে লাদাখকে বিচ্ছিন্ন করে দু’টি পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠন করার ঘোষণা করেন তিনি। আর তারপর থেকেই কার্যত ‘তালাবন্ধ’ হয়ে গিয়েছিল ভূস্বর্গ। এখনও স্বাভাবিক হয়নি অবস্থা। তবে এরমধ্যেই এবার জানা গেল, ৩৭০ ধারা বিলোপের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের পরে উপত্যকায় নিখোঁজ হয়েছে ১৩,০০০-র বেশি অপ্রাপ্তবয়স্ক! কাশ্মীর থেকে রাজধানীতে ফিরে এমনই দাবি করেছেন প্রগতিশীল মহিলা সংগঠনের সদস্যরা৷
সমাজকর্মী ও বামপন্থী আন্দোলনের নেত্রী অ্যানি রাজা, যোজনা কমিশনের প্রাক্তন সদস্য সঈদা হামিদরা জানান, কেন্দ্রীয় সরকার যতই বলুক পুরো স্বাভাবিক রয়েছে উপত্যকা, প্রকৃতপক্ষে ঠিক তার উল্টো ছবিটাই তাঁরা দেখে এসেছেন ১৭টি গ্রাম ও ১৩টি তালুক ঘুরে৷ তাঁদের দাবি, ‘কেন্দ্রের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি ৩৭০ ধারা বিলোপের এই সিদ্ধান্ত কাশ্মীরের অধিবাসীদের একজোট করেছে, যাবতীয় ছোটখাটো বিভেদকে দূরে সরিয়ে দিয়ে৷ ৮ থেকে ৮০ সবাই এখন মোদী সরকারের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে কথা বলছে৷ প্রত্যেকেরই অভিমত হল, সরকার তাদের কফিনে শেষ পেরেকটি পুঁতে দিয়েছে৷’
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার ভিড়ে ঠাসা সাংবাদিক সম্মেলনে অ্যানি রাজা জানান, ‘যে গ্রামগুলিতে আমরা গিয়েছিলাম, সেখনকার অধিকাংশ বাড়িতে ছোট ছোট ছেলেরা নিখোঁজ৷ এদের ধরে নিয়ে গিয়েছে সেনা বাহিনী ও আধা সেনা৷ তাদের অভিভাবকরা খোঁজ নিতে গেলে তাদের বলা হচ্ছে ভিন রাজ্যের জেলে গিয়ে খোঁজ নিতে৷ সেখানে গেলে দেখা যাচ্ছে জেলের বাইরের দেওয়ালে একটি তালিকা আটকানো রয়েছে, যেখানে নাম রয়েছে কাশ্মীরি অধিবাসীদের৷ এই ভাবে আগ্রা, যোধপুর, ফরিদাবাদের জেলে আছে অগণিত কাশ্মীরি ছোট ছোট ছেলে৷’
উপত্যকা থেকে ৩৭০ ধারা বিলোপের পরে জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের কী অবস্থা হয়েছে, তারও সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিয়েছেন অ্যানি রাজা৷ তিনি বলেন, ‘আগে যতবার কাশ্মীরে গিয়েছি, দেখেছি সেখানকার পুলিশেব হাতে বন্দুক৷ এবার দেখলাম সবার হাতে লাঠি৷ কারণ জিজ্ঞাসা করায় জানতে পারলাম ওপরের আদেশে বন্দুক প্রত্যাহার করা হয়েছে৷ এই বন্দুক প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়ে কাশ্মীর পুলিশের সদস্যরা বলছেন, আর জঙ্গীদের হাতে বন্দুক ছিনতাইয়ের ভয় থাকবে না ঠিকই, কিন্তু এবার কোনও জঙ্গী হামলা হলে পাল্টা দেওয়ার কোনও সুযোগও আর থাকবে না৷’
আবার যোজনা কমিশনের প্রাক্তন সদস্য সঈদা হামিদের জন্ম হয়েছিল কাশ্মীরেই৷ তাঁর বাবা সেখানকার শিক্ষা অধিকর্তা ছিলেন৷ পুরো উপত্যকাকে হাতের তালুর মতো চেনেন তিনি৷ ৩৭০ ধারা বিলোপের পরে কাশ্মীরের কী পরিস্থিতি হয়েছে, একটি উর্দু শায়েরি ব্যবহার করে তা জানিয়েছেন এই প্রাক্তন উচ্চপদস্থ কেন্দ্রীয় আমলা৷ তাঁর কথায়, ‘কাশ্মীরের পরিস্থিতি বোঝাতে গেলে বলতে হয় এই উপত্যকার পরিস্থিতি এখন বড় বেশি শান্ত, বড় বেশি অবসাদগ্রস্ত৷ সমাজের বিভিন্ন স্তরের জনগণের সঙ্গে কথা বলার পরে আমরা প্রাথমিক ভাবে যে হিসেবে পেয়েছি, তাতে দেখা যাচ্ছে ৩৭০ ধারা বিলোপের পরে উপত্যকা থেকে নিখোঁজ হয়েছে প্রায় ১৩,০০০ অপ্রাপ্তবয়স্ক৷’
প্রতিনিধি দলের অন্যতম সদস্য তথা আইনজীবী পুনম কৌশিকের দাবি, ৩৭০ ধারা বিলোপের পরে কাশ্মীরের সর্বত্র রাত ৮-টার মধ্যে সব ঘরের আলো নিভিয়ে দিতে হয়৷ তা না হলে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর রোষানলে পড়তে হবে স্থানীয় জনগণকে৷ পুনমের দাবি, ‘আমরা জম্মু-কাশ্মীর বার অ্যাসোসিয়েশনের অফিসে গিয়ে তালা ঝুলছে দেখেছি৷ স্থানীয় আইনজীবীরা আমাদের জানিয়েছেন, আদালতে কোনও কাজ হচ্ছে না৷ কার্যত পুরো বিচারব্যবস্থাটাই ভেঙে পড়েছে৷ দেশের সংবিধানের কোনও অস্তিত্ব নেই এই উপত্যকায়। মারাত্মক ভয়, গ্লানি আর অসম্মানকে সঙ্গী করে বাঁচার জন্য রোজ লড়াই করতে হচ্ছে।’