তিনি আধুনিক ভ্রমণের জনক, টমাস কুক। তাঁর জীবনসফর হার মানাবে কোনও অভিযাত্রীর রোমাঞ্চকর অভিযানকে। তাঁর হাত ধরেই বিশ্বদর্শন হয়েছিল অসংখ্য ভ্রমণার্থীর। যদিও নামের পাশে বংশসূত্রে রাঁধুনির পরিচয়। কিন্তু তাতে কি? অতীতের সমুদ্র অভিযান থেকে আধুনিক বিদেশভ্রমণের সহজপাঠ। এর মাঝের সেতুবন্ধন করেছিলেন কুক।
কুক পরিবার ছিল ধর্মপ্রাণ খ্রিস্টান। ধর্মপ্রচারের কাজে তিনি বিস্তীর্ণ অঞ্চল ভ্রমণ করেন। আজীবন তিনি ছিলেন মদ্যপানের ঘোর বিরোধী। তাঁর মতে, সামাজিক অবক্ষয়ের মূলে মদ্যপান। তাঁর বেড়ানোর পরিকল্পক হয়ে ওঠার পিছনেও এই দিকটি ছিল সক্রিয়। ১৮৪১ সালে তিনি একটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করেছিলেন।
লেস্টার থেকে সেই ট্রেন গিয়েছিল লাফবরো। একটি মদ্যপানবিরোধী সভায় যোগ দিতে গিয়েছিলেন বহু মানুষ। টমাস কুকের উদ্যোগে রওনা দিয়েছিলেন তাঁরা। ভাড়া ১ শিলিং। সঙ্গে বিনোদন এবং চা-জলপান। সে যুগের প্যাকেজ টুর। ১৮৪৫ সাল থেকে তিনি লাভজনক ভাবে এক্সকারশন আয়োজন শুরু করলেন। ইংল্যান্ড থেকে ট্রেন পাড়ি দিল স্কটল্যান্ড। টমাস কুকের উদ্যোগে শুরু হল পর্যটকদের সফর।
টমাস কুকের উদ্যোগের প্রধান দিক ছিল মহিলা যাত্রীদের জন্য সুরক্ষিত ভ্রমণের ব্যবস্থা। বাষ্পীয় ইঞ্জিন, রেলপরিবহণ উন্নত হওয়া, দ্রুত ডাক ব্যবস্থা এবং সুয়েজ খাল খুলে যাওয়ার ফলে টমাস কুকের ব্যবসা আরও ছড়িয়ে পড়ে। সময়ের থেকে এগিয়ে থাকা এই উদ্যোগী বানিয়েছিলেন ট্রাভেল ভাউচার্স, ট্রাভেল চেক এবং গাইড বুক।
শোক ভুলতে ভ্রমণকেই বেছে নিতেন তিনি। ব্যক্তিগত জীবনে শোকাহত হয়েছেন বারবার। প্রিয় মেয়ের অকালমৃত্যু শোকে স্তব্ধ করে দিয়েছিল তাঁকে। শেষ জীবনে দৃষ্টিহীন হয়ে গিয়েছিলেন টমাস কুক। ৮৩ বছর বয়সে প্রয়াত হন ১৮৯২ সালের ১৮ জুলাই। লেস্টারে স্ত্রী ও মেয়ের সমাধির পাশেই চিরঘুমে শায়িত তিনি।