‘বাংলায় আতঙ্কে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। কেউ ভয় পাবেন না। আমরা তো আছি নাকি। আমরা তো মরে যাইনি।’ সোমবার এনআরসি ইস্যুতে ঠিক এভাবেই রাজ্যবাসীকে অভয় দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপি নেতারা বাংলায় এনআরসি হওয়ার হুমকি দিলেও কেউ যাতে তা নিয়ে চিন্তা না করেন, সে কথাই গতকাল নেতাজি ইন্ডোরে দলীয় সভা থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। মমতা বলেন, ‘চিন্তা করার কী আছে? কে বলেছে ১৯৭১ সালের কাগজ খুঁজতে? গ্রামে গ্রামে কেউ কেউ বলছে রাজনীতি করার জন্য। জমিবাড়ির দলিল, রেশন কার্ড, ভোটার কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্সের যে কোনও একটা থাকলেই হবে। কারও বন্যায় কাগজ হারিয়ে যায়। আগুন লেগেছে। যাঁর কাগজ হারিয়ে গেছে, একটা করে এফআইএর করে রাখলেই হয়। বুদ্ধি খরচ করুন।’
তবে এভাবে রাজ্যবাসীকে চিন্তামুক্ত থাকার উপায় বাতলে দিলেও তিনি কিন্তু ফের এ কথা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন যে, বাংলায় এনআরসি করতে দেবেন না তিনি। তাঁর কথায়, ‘বাংলায় আমরা এনআরসি করতে দেব না। দয়া করে কারও কথায় নিজেদের জীবন নষ্ট করবেন না। রাজনৈতিক কারণে অনেকে প্ররোচনা দিচ্ছে।’ মমতার কটাক্ষ, ত্রিপুরায় এনআরসি হলে তো আগে সেখানকার মুখ্যমন্ত্রীই বাদ যাবে। আর বিহারের চিফ মিনিস্টার বলে দিয়েছে বিহার মে নেহি হোগা। সব কিছু অত সস্তা নয়। সেইসঙ্গে তিনি বলেন, “এখন ভোটার তালিকায় নাম তোলার কাজ চলছে। নাম তুলবেন শুধু ভোট দেওয়ার জন্য।’ ভোটার তালিকায় নাম তোলার প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘কোনও অসুবিধা হলে বা ভোটার লিস্টে নাম না উঠলে আমাদের দলের কর্মীদের বলবেন। আর সে না তুললে ‘দিদিকে বলো’-তে বলবেন। আমি ঘাড় ধরে তুলিয়ে দেব।”
রাজ্যজুড়ে বিজেপি যে এনআরসি নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে সাধারণ মানুষকে ভয় দেখাতে, এর বিরোধিতায় মমতা দলী কর্মীদের বলেন, ‘আপনারা সাহসী হয়ে প্রতিবাদ করুন। তাহলে আমি দুঃসাহসী হব।’ উল্লেখ্য, সম্প্রতি এনআরসি নিয়ে বিজেপির অপপ্রচারে ফলে আতঙ্কে মৃত্যু হয়েছে ৬ রাজ্যবাসীর। এ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘দুঃখের ঘটনা বাংলাতেও ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই লজ্জা ঢাকার জায়গা নেই।’ গতকাল রাজ্য মন্ত্রীসভার বৈঠকের শেষে নিজেদের এলাকায় এনআরসি আতঙ্ক মোকাবিলায় সতর্ক থাকতে বলেছেন দলনেত্রী। পরিস্থিতিতে নজর রেখে প্রয়োজন মতো রাজ্যে সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করে সাধারণ মানুষকে আশ্বস্ত করতে বলেছেন মন্ত্রীদের।