মোদী সরকারের দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতেই কেন্দ্রীয় নীতির জেরে দেশের অর্থনীতিতে গভীর মন্দা ও নীতি-পঙ্গুত্ব দেখা দিয়েছে। শিল্পে খরা। নগদ টাকার জোগান নেই। জিডিপি মুখ থুবড়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে গোটা দেশের পাশাপাশি ভুগতে হচ্ছে বাংলাকেও। মন্দার প্রভাবে কপাল মন্দ পুজোর বাজারেরও। অবস্থা এমনই যে পুজোর চারদিন পরার মতো পোশাক-আশাক, জুতোই জুটছে না, তায় আবার সোনা-দানা, গাড়ি-বাড়ি! কিন্তু অন্যান্যবার পুজোর সময় গাড়ির বুকিং, সোনা কেনার হিড়িক, বাড়ির ভিতপুজো বা ছাদ ঢালাই দেখা যেত চোখে পড়ার মতো। তবে এবার সর্বত্রই ছাঁটাই-অসুরের কোপ। মাইনে ঠিকমতো মিলছে না, বোনাস তো দূরের কথা। গাড়ির শোরুমগুলো বহু কর্মীকে বসিয়ে দিয়েছে। ছোট সোনার দোকানগুলিতেও একই দশা। নির্মাণ শিল্পেও নেমেছে ধস। অবস্থা সামাল দিতে উৎপাদন বন্ধ করে দিতেও বাধ্য হচ্ছে বহু সংস্থা।
প্রসঙ্গত, কলকাতায় ছোট-বড় মিলিয়ে চার চাকার শোরুম রয়েছে প্রায় ৩০টি। কিন্তু বিগত কয়েকমাস ধরে চাকাই গড়াচ্ছে না। বিমায় ছাড়, অন রোড ফ্রি সার্ভিস, বাড়তি সুবিধা দিয়েও কোনও লাভ হচ্ছে না। যেখানে অন্যান্যবার পুজো এলেই বেড়ে যেত গাড়ির বিক্রি। বুকিং আসত মহালয়ার মাসখানেক আগে থেকেই। কিন্তু জানা গেছে, আগস্টে মারুতির যাত্রীবাহী গাড়ির বিক্রি কমেছে ৩৬ শতাংশ। বিকিয়েছে মাত্র ৯৩১৭৩টি গাড়ি। গত বছর এই সময় তারা বিক্রি করেছিল ১৪৫৮৯৫টি গাড়ি। হুন্ডাইয়ের বিক্রি কমেছে ১৭ শতাংশ আর মাহিন্দ্রার ৩২ শতাংশ। তবে টাটার বিক্রি ৫৮ শতাংশ কমায় সবচেয়ে বেশি সমস্যায় এই সংস্থার শোরুমের কর্মীরা। পাশাপাশি মোটর বাইক এবং স্কুটির বাজারেও ধস। অথচ, এর আগে পুজোর মুখে হাজার উৎপাদনেও দু’চাকার চাহিদা মেটাতে পারত না সংস্থাগুলি। তবে এবার বিক্রি কমেছে ৩০ শতাংশ।
অন্যদিকে, সোনার বাজার ঝিমোচ্ছে না বলে বরং ঘুমাচ্ছে বলাই ভাল। বউবাজারে মেট্রোর কাজের কারণে যে ধস, তার ধাক্কা সামলে উঠতে হয়ত বেশি সময় লাগবে না, কিন্তু ক্রেতার জন্য হাপিত্যেশ করে বসে থাকার ছবিটা কবে বদলাবে তা বলতে পারছেন না কেউই। এবার ৪০ হাজারে পৌঁছে যাওয়া সোনার দাম গত কয়েক দিনে সামান্য কমলেও তা বাজারকে চাঙ্গা করতে পারেনি। ক্রেতা নেই। ফলে ছেদ পড়েছে উৎসবের মরশুমে সোনা কেনার রীতিতে। আসলে পুজোর সময় শুভ বলে যাঁরা সোনার দোকানে ভিড় জমাতেন তাঁদের ইচ্ছে থাকলেও উপায় নেই। বউবাজার, বড়বাজার অথিবা জেলার সোনাবাজার- সর্বত্রই মাছি তাড়ানোর অবস্থা। ইতিমধ্যেই ঝাঁপ বন্ধ করেছে বেশ কিছু ছোট দোকান। কাজ হারিয়েছেন বহু কারিগর। সর্বভারতীয় জেমস অ্যান্ড জুয়েলারি ডোমেস্টিক কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান শঙ্কর সেন সাফ জানাচ্ছেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ ছাড়া বাজার ঘুরে দাঁড়াবে না।’