বেজে উঠেছে আলোর বেণু। আগমনীর সুরে মাতছে ভুবন৷ নীলাকাশে ভেসে চলা সাদা মেঘের ভেলা আর মাথা দুলিয়ে কাশফুলেরা জানান দিচ্ছে যে, আর মাত্র কয়েকদিনের অপেক্ষা। তারপরেই সপরিবারে মর্ত্যে হাজির হবেন দেবী দুর্গা। তাই শহর কলকাতার ছোট-বড় সব পুজোই এখন ব্যস্ত তাদের মন্ডপ ও প্রতিমায় ফাইনাল টাচ দিতে। ব্যস্ততা চরমে উত্তর কলকাতার অন্যতম বড় পুজো কুমারটুলি সর্বজনীনেও। এখানে দেবী দুর্গা এবার সেজে উঠছেন কল্পতরু রূপে। জোরকদমে চলছে ‘মা কে বলো’ প্রচার। কলকাতার শিল্পী বাপ্পা হালদার এবং নৈহাটির শিল্পী মনোজ বাড়ুই-এর ভাবনায় কল্পবৃক্ষরূপিণী মা এখানে ইচ্ছেপূরণ করবেন তাঁর সকল সন্তানের। দর্শনার্থীরা মায়ের কাছে বলতে পারবেন তাঁদের মনস্কামনার কথা। বিগত ৬-৭ মাস ধরে চলছে কাজ। রাতদিন এক করে কাজ করছেন প্রায় ৩০-৪০ শিল্পী।
পুজো কমিটির তরফে সুপ্রভাত ভট্টাচার্য বলেন, “কলকাতার বিভিন্ন প্রাচীন সর্বজনীন পুজোগুলির মধ্যে কুমোরটুলি সর্বজনীন অন্যতম। এই পুজোই প্রথম একচালার প্রতিমা ছেড়ে ভিন্ন চালার প্রতিমার প্রচলন শুরু করে। থিমের স্রষ্টা যদি কাউকে বলা যায়, সেই কৃতিত্বও কুমোরটুলি সর্বজনীনের। এ বছর ৮৯ তম বর্ষে আমাদের থিম ‘কল্পতরু’। ভাবনা ও রূপদানে শিল্পী বাপ্পা হালদার ও মনোজ বাড়ুই। প্রতিমা গড়ছেন শিল্পী পরিমল পাল। আবহ করছেন অর্ক-পঙ্কজ। তবে থিম কল্পতরু হলেও সারা কলকাতা আমরা যে হোর্ডিংয়ে ছেয়ে দিয়েছি, তাতে লেখা ‘মাকে বলো’। কারণ ঈশ্বরের কাছে কিছু চাওয়ার হলে সবাই কল্পতরুতে এসে ঢিল বেঁধে দিয়ে যায়। তেমনি দর্শনার্থীরা তাঁদের মনস্কামনা আমাদের এই পুজোয় এসে মাকে জানিয়ে যেতে পারবেন। এ থিমের রূপদানে খরচ হচ্ছে ৪২ লক্ষ টাকা।”
শিল্পী বাপ্পা হালদারের কথায়, “৮৯ তম বর্ষে কুমোরটুলি সর্বজনীনের থিম ‘কল্পতরু’। এই কল্পতরু হচ্ছে ইন্দ্রলোকের দেবতরু, যা সকলের মনস্কামনা পূরণ করে। এর ওপর ভিত্তি করেই আমরা আমাদের পুজোমন্ডপটিকে এবার ইন্দ্রলোক বানানোর চেষ্টা করছি। দেবী নিজেই এখানে কল্পতরু রূপে বিরাজ করছেন। পুজো মন্ডপের বাইরে থেকে দেখা যাবে একটি বড় গাছ। সেই গাছেরই একটি মৃতপ্রায় ডাল ঢুকে আসে মন্ডপের ভিতর দেবীপ্রতিমার কাছে। যার মাধ্যমে আমরা বোঝাতে চাইছি, ওই মৃতপ্রায় ডালটি নতুন জীবন লাভের আশায় মায়ের কাছে তার ইচ্ছেপূরণের আবেদন করছে। এভাবে বৃক্ষছেদন বন্ধের বার্তাও দিচ্ছি আমরা।” প্রতিবছরই ভিড় উপচে পড়ে কুমোরটুলির মন্ডপে। এবারও যে পুজোর কদিন নিজেদের ইচ্ছের কথা মাকে বলতে এখানে হাজির হবেন হাজার হাজার মানুষ, তা এখন থেকেই বলা যায়।