‘হোক কলরব, ফুলগুলো সব লাল না হয়ে নীল হল ক্যান?’ ৫ বছর আগের ১৯ সেপ্টেম্বর এই গানেই ভরে উঠেছিল যাদবপুরের আকাশ বাতাস। গর্জে উঠেছিল হাজার হাজার তরুণ রক্ত। এ বছর ঠিক ওই দিনই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়র উপস্থিতিতে এবিভিপির তান্ডবে রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে গোটা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। ভাঙচুর চলে ক্যাম্পাস জুড়ে। ভাঙা হয় ছাত্র-সংসদের ইউনিয়ন রুমে, আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় গেটের বাইরে। যার প্রতিবাদে এবার ৫ বছর আগের সেই বৃষ্টি-ভেজা কলকাতার আবেগেই যেন আবার সওয়ার হল যাদবপুরের ছাত্র-যুবরা। শুক্রবার বিকেলে যাদবপুর থেকে গোলপার্কের পথে কিছুটা হলেও ফিরে এল, রবীন্দ্রসদন থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত কলরবের মহা-মিছিলের বৈপ্লবিক স্মৃতি। স্লোগান উঠল- ‘কলরব থামে না’! ‘ফাসিস্ত শক্তি দূর হটো’! ‘এনাফ’ বা ‘এনআরসি মানছি না’ লেখা পোস্টারে ছয়লাপ হল রাজপথ।
দুপুরে এইট বি-র মোড়ে লাউডস্পিকারে মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়কে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে আটকে রাখার প্রতিবাদে প্রচার চলছিল পুরোদমে। বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘গেরুয়া হামলা’র প্রতিবাদে কয়েক হাজার ছাত্র-শিক্ষক-প্রাক্তনী-সহকর্মীর মিছিল পাল্টা ঢেউ তুলে গেল। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর উপস্থিতি-পরবর্তী হামলা নিয়ে প্রতিবাদী আবেগ তুঙ্গে ওঠে ওই ধিক্কার-মিছিলকে ঘিরে। মিছিলের কন্ঠ এনআরসির উপদ্রব এবং শিক্ষাঙ্গনে ‘গেরুয়া দখলদারি’ নিয়েও সরব হয়েছে। সঙ্গে রোল উঠেছে, ‘এক ধাক্কা অউর দো, ক্যাম্পাস বেচনেওয়ালো কো’ কিংবা ‘দেশ বেচনেওয়ালো কো’। পড়ুয়ারা মুখে মুখে স্বতঃস্ফূর্ত গানও বেঁধেছেন ‘বিজেপি দূর হটো’! আবার ঢাকুরিয়ার আমরির সামনে এসে রোগীদের কথা ভেবে সুর চড়ানো বন্ধ রাখে এই ‘মানবিক’ মিছিল। তবে অন্ধকার ঢাকুরিয়া সেতু থেকে নামার মুখে জ্বলে উঠেছিল অজস্র মোবাইল ফোন।
যাদবপুরের ৮০-র দশকের ছাত্রী মৌসুমি ভৌমিক বা একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী ও শিক্ষক— এমন অনেকেই ছিলেন গতকালের ওই মিছিলের মুখ। মিছিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা, বিজ্ঞান এবং ইঞ্জিনিয়ারিং— তিনটি শাখার পড়ুয়ারাই শামিল হন। বাবুল সুপ্রিয়ের ফেসবুক প্রোফাইল থেকে যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে, তাঁদের অনেককেও দেখা গিয়েছে মিছিলে। এসেছিলেন সল্টলেক ক্যাম্পাস ও সেন্ট জেভিয়ার্সের ছাত্ররা। যাদবপুরের পড়ুয়াদের সমর্থনে পথে নামেন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারাও। এমনকী সেদিন এবিভিপির হামলায় মাথা ফেটেছিল যে ছাত্রের, সেই উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা পবন শুক্লও কপালের ক্ষতে ব্যান্ডেজ নিয়ে যোগ দিয়েছিলেন মিছিলে। মিছিলে অংশ নেওয়া পড়ুয়াদের একটাই বক্তব্য, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি দখলের জন্য এবিভিপি আঘাত হানলে, পাল্টা আঘাত তাদেরও ফিরিয়ে দেওয়া হবে।’