কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে এবার নিজেদের স্বয়ংশাসিত প্রাতিষ্ঠানিক বৈশিষ্ট্য হারাতে চলেছে ইপিএফও এবং ইএসআইসি। জানা গেছে, ‘অতিসক্রিয়তা’ দেখিয়ে এবার কর্মচারী ভবিষ্যনিধি সংগঠনকে (ইপিএফও) সরাসরি নিজেদের হাতে নিতে চাইছে মোদী সরকার। এই মুহূর্তে ইপিএফও কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রকের আওতাধীন একটি স্বশাসিত সংস্থা হিসেবে কাজ করছে। ইপিএফও’র মতো কর্মচারী রাজ্য বিমা নিগমও (ইএসআইসি) বর্তমানে কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রকের অধীনস্থ একটি সংস্থা। সার্বিক দায়ভার প্রত্যক্ষভাবে কেন্দ্রের হাতে চলে এলে এর তহবিলের প্রায় ১০ লক্ষ কোটি টাকার দায়ভারও সম্পূর্ণভাবে কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে আসবে। এর দেখভাল করবে একটি কেন্দ্রীয় বোর্ড। এই মর্মেই সামাজিক সুরক্ষা কোড বিল, ২০১৯ এর খসড়া প্রস্তাব তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রক।
শুধু তাই নয়। একইসঙ্গে সেই খসড়া প্রস্তাবে এ-ও বলা হয়েছে, পদাধিকার বলে কর্মচারী ভবিষ্যনিধি সংগঠন (ইপিএফও) কিংবা কর্মচারী রাজ্য বিমা নিগমের (ইএসআইসি) চেয়ারম্যানের যে দায়িত্ব সামলান কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রী স্বয়ং, সেই অধিকারও সরিয়ে নেওয়া হোক। বরং চেয়ারম্যান এবং ভাইস চেয়ারম্যান কাকে করা হবে, তা স্থির করুক কেন্দ্রীয় সরকারই। সামাজিক সুরক্ষা কোড বিল, ২০১৯-এর সংশ্লিষ্ট খসড়া প্রস্তাব ইতিমধ্যেই নিজেদের ওয়েবসাইটে আপলোড করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রক। আগামী ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত এই খসড়া প্রস্তাবের উপর সকলেই মতামত জানাতে পারবেন। সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞপ্তিতে এমনটাই জানিয়েছে ভারত সরকারের ডেপুটি সেক্রেটারি জে কে সিং।
শ্রমমন্ত্রক সূত্রের খবর, ২৫ অক্টোবরের ফের এই ইস্যুতে একটি ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডাকতে চলেছেন কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রী সন্তোষকুমার গঙ্গওয়ার। শ্রম সংক্রান্ত ৪৪টি আইনকে জুড়ে দিয়ে চারটে ‘লেবার কোড’ তৈরির ব্যাপারে ইতিমধ্যেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রক। যার মধ্যে ‘লেবার কোড অন ওয়েজেস’ সংসদের সাম্প্রতিক অধিবেশনেই পাস হয়ে গিয়েছে। লোকসভায় পেশ হয়েছে কর্মক্ষেত্রে সুরক্ষা (অকুপেশনাল সেফটি) সংক্রান্ত লেবার কোড। সংসদের আগামী শীতকালীন অধিবেশনেই তা পাস করাতে মরিয়া কেন্দ্র। এবার এই সামাজিক সুরক্ষা কোড বিল (সোশ্যাল সিকিউরিটি কোড বিল, ২০১৯) নিয়ে যাবতীয় বিতর্ক মিটিয়ে এটিকেও সংসদে অবিলম্বে পাস করাতে চাইছে কেন্দ্র।
সামাজিক সুরক্ষা কোড বিলের উল্লিখিত প্রস্তাব যদি মেনে নেওয়া হয়, তাহলে অদূর ভবিষ্যতে নিজেদের স্বয়ংশাসিত প্রাতিষ্ঠানিক বৈশিষ্ট হারাতে চলেছে ইপিএফও এবং ইএসআইসি। সামাজিক সুরক্ষা কোড বিলের খসড়ায় কেন্দ্রীয় বোর্ডের গঠন সংক্রান্ত যে প্রস্তাব শ্রমমন্ত্রক দিয়েছে, তাতে বলা হয়েছে এর চেয়ারম্যান এবং ভাইস চেয়ারম্যানও নিয়োগ করবে কেন্দ্র সরকার। এই বোর্ডে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি থাকবেন পাঁচজন। বিভিন্ন রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে প্রস্তাবিত ওই কেন্দ্রীয় বোর্ডে থাকবেন ১৫ জন প্রতিনিধি। এবং যেসব সংস্থায় এটি কার্যকর থাকবে, সেগুলির মালিক-কর্মচারী প্রতিনিধি হিসেবে সর্বোচ্চ ১০ জনের উপস্থিতি থাকবে ওই কেন্দ্রীয় বোর্ডে।
এই মুহূর্তে প্রভিডেন্ট ফান্ডের ক্ষেত্রে একজন সেন্ট্রাল প্রভিডেন্ট ফান্ড কমিশনার থাকেন। ইপিএফও’র চেয়ারম্যানের পরেই যাঁর স্থান। কিন্তু সামাজিক সুরক্ষা কোড বিলের উল্লিখিত খসড়ায় এই পদটিকেই তুলে দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। পরিবর্তে বলা হয়েছে, বোর্ডের কাজকর্ম খতিয়ে দেখার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার একজন চিফ এগজিকিউটিভ অফিসারকে (সিইও) নিয়োগ করুক। একইভাবে ইএসআইসি’র ক্ষেত্রেও ডিজির পদ তুলে দিয়ে একজন সিইও এবং একজন ফিনান্সিয়াল কমিশনার নিয়োগ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে খসড়ায়।