ঘুরপথে এলআইসি-র টাকায় সরকারি কোষাগারের ঘাটতি মেটানোর রাস্তা বেছে নিয়েছে মোদী সরকার। এই নিয়ে কেন্দ্রকে তীব্র কটাক্ষ করেছেন কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিং সুরজেওয়ালা। টুইটে হিন্দীতে তিনি লিখেছেন, ‘ব্যাপার কি টুট গয়ি কমর, জটিল ট্যাক্স প্রণালী সমঝ না আই। ব্যাপারি হুয়া বেহাল, ইধর কুঁয়া হ্যায় তো উধর খাই’। অর্থাৎ ব্যবসার হাল বেহাল। জিএসটি সমস্যায় জর্জরিত। পরিস্থিতি এমন যেন একদিকে কুয়ো তো অন্যদিকে গভীর খাদ।
অর্থনৈতিক শ্লথগতির জেরে একদিকে যখন বিভিন্ন ব্যাঙ্কের শেয়ার সূচক নিম্নগামী, তখন পরিস্থিতি সামাল দিতে এলআইসি-কে কাজে লাগাচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার। গত ৫ বছরে বেশ কিছু রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থায় ১০ লক্ষ ৭০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে এলআইসি। যার বেশিরভাগই ধুঁকতে থাকা সংস্থা। প্রায় সমস্ত বিনিয়োগ করা হয়েছে ইক্যুইটি হিসেবে। যেমন, গতবছর আইডিবিআই ব্যাঙ্কের মূলধন খাতে ২১ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ৫১ শতাংশ মালিকানা নিয়েছিল এলআইসি। কিন্তু ব্যাঙ্কটি এতটাই ক্ষতির সম্মুখীন, যে ওই বিনিয়োগে বিশেষ কাজে আসেনি। ফলে আইডিবিআই ব্যাঙ্কে আবারও বিনিয়োগ করতে হয়েছে সরকার এবং এলআইসি-কে।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিকে পুনরুজ্জীবিত করতে ৯,৩০০ কোটি টাকা মূলধন হিসেবে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যার মধ্যে সরকার ৪,৫৫৭ কোটি এবং এলআইসি ৪,৭৪৩ কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে। গত জুনে ত্রৈমাসিক রিপোর্ট অনুযায়ী, আইডিবিআই ব্যাঙ্কের ক্ষতির পরিমাণ ৩,৮০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে আবার অনাদায়ী ঋণের বোঝা বিপুল অঙ্কের। মোট ঋণের ২৯ শতাংশ। বেশিরভাগই আবার কর্পোরেট ঋণ। অতএব কর্পোরেট অনাদায়ী ঋণের বোঝা ঘুরেফিরে এসে পড়েছে এলআইসি-র ওপর।
কংগ্রেস নেতা রণদীপের অভিযোগ, শুধু আইডিবিআই নয়, শিল্পপতিদের অনাদায়ী ঋণের কবলে পড়েছে, তাদের দায়ভার এলআইসি–র ঘাড়ে চাপিয়ে দিচ্ছে মোদি সরকার। উদাহরণ হিসেবে কংগ্রেস নেতারা তুলে ধরছেন পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের কথা। এলআইসি এই ব্যাঙ্কের শেয়ার কিনেছে। পিএনবি–র ৮ হাজার কোটি টাকা গায়েব করে বিদেশে চম্পট দিয়েছেন নীরব মোদি, মেহুল চোকসিরা। এছাড়া এলাহাবাদ ব্যাঙ্ক, স্টেট ব্যাঙ্ক এবং কর্পোরেশন ব্যাঙ্কের শেয়ারও কিনেছে এলআইসি। সেইসঙ্গে এনটিপিসি, এনএইচপিসি, এনবিসিসি, হিন্দুস্তান কপার ও কোল ইন্ডিয়াতেই বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করেছে তারা।
অর্থনীতিবিদদের একাংশের মত, দেশে আর্থিক শ্লথগতির জেরে যে মন্দামুখী পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা থেকে মুক্তি পেতে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। উল্লেখ্য, ২০১৮-র ৩১ মার্চ পর্যন্ত এলআইসি–র মোট সম্পদের পরিমাণ ৩১ লক্ষ কোটি টাকা। যার প্রায় সবটাই মধ্যবিত্ত ও নিম্ন–মধ্যবিত্তের আমানত।