বাংলার মানুষ দারুণ ভাবে আপন করে নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষিত কর্মসূচী ‘দিদিকে বলো’কে। এখন এক ফোনেই সমস্যার সমাধান। কর্মসূচী শুরু হওয়ার থেকেই বহু মানুষ মমতাকে ফোন করেছেন, জানিয়েছেন তাঁদের সমস্যার কথা। এই এক ফোনেই কেউ খুব সহজেই পেয়েছেন কাস্ট সার্টিফিকেট, কেউ পেয়েছেন মাছ ধরতে যাওয়ার যান, কেউ বা লক্ষাধিক টাকার অপারেশন করাতে পেরেছেন মমতার উদ্যোগে। এবার কর্মসূচীর সুফল পেলেন স্বামী পরিত্যক্তা এক বধূ। মমতার উদ্যোগে মাথার ওপর স্থায়ী ছাদ পেলেন কাটোয়ার ওই মহিলা।
আজ থেকে প্রায় ১২ বছর আগে কাটোয়ার গোপখাজি গ্রামের বাসিন্দা মন্দিরা চক্রবর্তীর স্বামী দিলীপ চক্রবর্তী নিখোঁজ হয়ে যান। দুই ছেলেকে নিয়ে অথৈ জলে পড়েন মন্দিরা। মাথার ওপর ছাদ ছিল না, ছিল না দু’বেলা দু’মুঠো অন্ন সংস্থান। নানা জায়গায় সাহায্যের জন্য ঘোরাঘুরি করলেও মেলেনি সাহায্য। সেলাইয়ের কাজ করে কোনও রকমে সংসার চালাচ্ছিলেন। কিন্তু বাড়ি করার মতো ক্ষমতা ছিল না। তাই অভাবের অথৈ সমুদ্রে খড়কুটো ধরার মতো ‘দিদিকে বলো’র ফোন নম্বরে ফোন করেছিলেন। ভাবতেই পারেননি যে একটা ফোনেই এত কাজ হবে।
মন্দিরা দেবীর ফোনের কিছুদিনের মধ্যেই ঘরের টাকা পেয়ে যান তিনি। এবার বৃষ্টিতে আর চিন্তিত হবেন না মন্দিরাদেবী। শীতে দুই ছেলেকে নিয়ে কাঁপতেও হবে না দিনের পর দিন। বহুদিন বাদে তাই হাসির রেখা মন্দিরাদেবীর মুখে। তিনি বলেন, ‘বিশ্বাস করুন ‘দিদিকে বলো’–তে ফোন করার পরও ভাবিনি সত্যি সত্যিই ঘর পাব। ৫ আগস্ট ফোন করি। তার পর মুখ্যামন্ত্রীর কালীঘাট অফিস থেকে দেখা করার জন্য ফোন আসে। ১০ আগস্ট গিয়ে দেখা করে আসি। তার ৪ দিনের মাথায় পঞ্চায়েত সমিতির প্রতিনিধিরা এসে সরেজমিনে সব কিছু দেখে যান। এখন ঘরের টাকা পেয়ে গেলাম। কতটা উপকার যে আমার হল, তা বলে বোঝাতে পারব না। আমার খুব ইচ্ছে বাড়িটা হয়ে গেলে গৃহপ্রবেশের পর একবার কালীঘাটে যাব। যদি সুযোগ পাই দিদিকে একবার প্রণাম করে আসব। দিদি যে এত তাড়াতাড়ি আমার জন্য মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দেবেন, স্বপ্নেও ভাবিনি।’
মন্দিরার ফোন পেয়েই উদ্যোগ শুরু হয়। মুখ্যমন্ত্রীর অফিস থেকে ফোন আসে পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসনের কাছে। বর্ধমান থেকে নির্দেশ পান সংশ্লিষ্ট কাটোয়া ১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কণিকা বাইন সরকার। তিনি বললেন, ‘সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে দেখেছি সত্যিই মন্দিরাদেবীর একটা ঘর দরকার। তাঁকে অনেক কষ্ট করে দুই সন্তানকে নিয়ে থাকতে হয়। তাই সব কিছু দেখে সেই অনুযায়ী রিপোর্ট তৈরি করে পাঠিয়ে দিয়েছি।’ রাজ্য সরকারের বাংলা আবাস যোজনার প্রথম কিস্তির ৬০ হাজার টাকা মন্দিরাদেবীর হাতে তুলে দিয়েছেন কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বললেন, ‘দিদিকে বলো যে কর্মসূচী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হাতে নিয়েছেন, তার সুফল বাংলার প্রত্যন্ত এলাকায় পৌঁছে যাচ্ছে। গৃহহীন মন্দিরাদেবীর ঘর পাওয়াই তার উজ্জ্বল উদাহরণ। এমন নজির রোজই বাংলা জুড়ে প্রতিফলিত হচ্ছে।’