সরু সরু গলি, সারি সারি পুরনো বাড়ি, ব্রিটিশ-গথিক স্থাপত্য, অলি গলি, চিলেকোঠায় ভরা এক টুকরো পুরনো কলকাতা। ১৯৩৪ সালে সাবেক কলকাতার অন্যতম হৃদপিন্ড এই হাতিবাগান অঞ্চলে যাত্রা শুরু হাতিবাগান নবীন পল্লীর দুর্গাপুজোর। সেইসময়ে স্থানীয় বাসিন্দারাই ছোট আকারে পুজো করতেন। ধীরে ধীরে ক্রমশই ধারেভারে বড় হয়েছে পুজো। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তাতে লেগেছে থিমের ছোঁয়া। এবং গত একদশক ধরে তারা বিভিন্ন থিমে চমকে দিয়েছে শহরকে। অসুখই হল মনুষ্যসমাজের সবচেয়ে বড় অসুর। এবার তাকেই বিনাশ করবেন দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গা। এমনই ভাবনা নিয়ে হাতিবাগান নবীনের এবারের থিম ‘লাইফলাইন’। নিজের জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকেই যার রূপদান করছেন শিল্পী সুবল পাল।
সুবল পালের বাবা গোপালচন্দ্র পাল গত ৩ বছর ধরে ক্যানসারে আক্রান্ত। একসময় যিনি নিজেও শিল্পী ছিলেন। তাঁর শিল্পে একসময় চওড়া হয়েছিল অনেক পুজো কমিটির মুখের হাসি। কিন্তু বার্ধক্যের পাশাপাশি আজ কর্কট থাবা বসিয়েছে তাঁর শরীরে। যার ফলে এখন ক্যানসারের সঙ্গে যুদ্ধ করছেন গোপালচন্দ্র। আর নিজের পেশা-শিল্পসাধনার পাশাপাশি বাবার সেবাতেও মগ্ন শিল্পী সুবল। তবে বাবাকে সেবা করতে করতেই এক নতুন ভাবনা এসেছিল তাঁর মাথায়। এবার হাতিবাগান নবীন পল্লীতে সেই ভাবনাকেই ফুটিয়ে তুলছেন তিনি। ক্যানসারের মতো মারণ রোগকে অসুর রূপে হাজির করার পাশাপাশি এক নতুন ‘লাইফলাইন’-এর সন্ধান দিতে চান তিনি।
হাতিবাগান নবীনের সম্পাদক অংশুমান তরফদার এখন খবরকে জানান, ‘এ বছর ৮৬ তম বর্ষে পদার্পণ করেছে আমাদের পুজো। আমাদের এবারের থিম লাইফলাইন। এই লাইফলাইন বিষয়টি এই মুহূর্তে সমাজের প্রত্যেকটি মানুষের কাছেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কারণ দিনে দিনে যেভাবে ক্যানসার, টিউবারকুলোসিস, হাই ব্লাডপ্রেসার, হাই সুগারের মতো রোগের প্রকোপ বাড়ছে, প্রায় প্রত্যেকটি মানুষই তার শিকার হচ্ছে। তাই আমরা আমাদের থিমের মাধ্যমে সকলকে সচেতন করার চেষ্টা করছি। এটি কোনও দুঃখ বা অবসাদের থিম নয়। মন্ডপ, প্রতিমা, আলো-সহ সমগ্র ভাবনা ও তার রূপায়নে শিল্পী সুবল পাল।’ প্রতিবারই দর্শনাথীদের ঢল নামে হাতিবাগান নবীনের পুজো দেখতে। এবারও যে নতুন ‘লাইফলাইন’-এর খোঁজ পেতে এখানে উপচে পড়বে মানুষের ভিড়, সে কথা হলফ করেই বলা যায়।