‘নোটবন্দীর পর যখন দেশের অর্থনীতি নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে, ঠিক সেই সময় অযথা তাড়াহুড়ো করে জিএসটি লাগু করা হল। এই ধাক্কা সামলাতে পারেনি অর্থনীতি। তার জেরেই মন্দা।’ দিন কয়েক আগেই হিন্দী সংবাদপত্র দৈনিক ভাস্করকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এভাবেই জিএসটিকে কাঠগড়ায় তুলেছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। তাঁর এই অভিযোগ আদৌ ভ্রান্ত নয়।
এই মুহূর্তে উত্তর-পূর্বের পাঁচ রাজ্য বাদে বাকি সব রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকেই ক্ষতিপূরণ দিতে হচ্ছে কেন্দ্রকে। কারণ জিএসটি চালুর পরে বছরে অন্তত ১৪ শতাংশ হারে রাজস্ব আয় বাড়বে বলেই ধরেছিলেন কেন্দ্র ও রাজ্যের অর্থমন্ত্রীরা। কিন্তু তা না হওয়ায় প্রতিশ্রুতি মেনে কেন্দ্রকে ক্ষতিপূরণ দিতে হচ্ছে। আর তার ধাক্কাতে এবার সেজন্য তৈরি তহবিলে টান পড়েছে। অর্থ মন্ত্রকের আশঙ্কা, ফেব্রুয়ারিতে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার মতো টাকাই হয়তো তহবিলে থাকবে না।
প্রসঙ্গত, জিএসটি চালুর সময়ে ঠিক হয়, দামি গাড়ির মতো বিলাসবহুল পণ্য, তামাক ও নরম পানীয়ের মতো ক্ষতিকারক সামগ্রীতে সেস বসিয়ে তহবিল তৈরি হবে। এ দিকে গাড়ি শিল্পের সঙ্কটের জেরে তাতে জিএসটি কমানোর দাবি উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে জিএসটি কর্তারা মনে করছেন, গাড়ির ওপরে জিএসটি কমার আশা খুবই কম। বরং সেস বাড়ানো হতে পারে। কারণ প্রাথমিক হিসেব অনুযায়ী, গাড়িতে জিএসটি কমিয়ে ১৮ শতাংশ করা হলে বছরে ৫০,০০০ কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হবে।
২০ সেপ্টেম্বর গোয়ায় বৈঠকে বসবে জিএসটি পরিষদ। তার আগে অধিকাংশ রাজ্যের অর্থমন্ত্রীই গাড়িতে কর কমানোর পক্ষে নন। শিল্পের দাবি প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের জবাব ছিল, রাজ্যের অর্থমন্ত্রীরা কী বলছেন, তা শোনা দরকার। কিন্তু তাঁদের অনেকের মতে, অর্থনীতিতে ঝিমুনি এসেছে। সব পণ্যেরই বিক্রি কমেছে। মানুষ খরচ করতে চাইছে না বা তার টাকা নেই। জিএসটি কমলেই গাড়ি বিক্রি বাড়বে না। উল্টে রাজ্যের আয় কমবে।
তবে কিছু বিলাসবহুল ও ক্ষতিকারক পণ্যের উপরে সেস বাড়ানোর সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না জিএসটি কর্তারা। তাঁদের বক্তব্য, বাজেটের অনুমান ছিল, চলতি অর্থ বছরে ক্ষতিপূরণ তহবিলের জন্য সেস বাবদ প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকা আয় হবে। কিন্তু প্রথম চার মাসে ৪৫,০০০ কোটির বেশি ক্ষতিপূরণ মেটাতে হয়েছে। সারা বছর ধরেই প্রায় ১.৩ লক্ষ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। তাই ক্ষতিপূরণ জোগানোর তহবিল ভরতে বাড়তি সেস না বসিয়ে উপায় থাকছে না বলে তাঁদের মত। উল্লেখ্য, আগস্টে জিএসটি বাবদ আয় বেড়েছে মাত্র ৫ শতাংশ। আর এপ্রিল থেকে আগস্টে আয় ২০ শতাংশের বেশি কমেছে। যা কপালে ভাঁজ ফেলেছে জিএসটি কর্তাদের।