হিন্দী দিবসে কেন্দ্রের তরফে অমিত শাহ ঘোষণা করেছিলেন ‘এক দেশ এক ভাষা’ হবে। মূলত হিন্দী ভাষাকে জোর দিতেই তিনি এমন মন্তব্য করেছিলেন। কিন্তু তারপরই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এর বিরোধিতা শুরু হয়। বিরোধী দলনেতা এমনকি অনেক বিজেপি নেতাও শাহের এই ভাবনার বিরুদ্ধে মন্তব্য করেন।
বেশ কয়েকমাস যাবৎ বাংলাতেও হিন্দী ভাষার তথাকথিত আগ্রাসন রোধ করে সব জায়গায় বাংলা ব্যবহারের একটি আন্দোলন ক্রমশই দানা বাধছে এবং রাজ্যে ‘জোর করে হিন্দী চাপিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে’ প্রতিবাদও হচ্ছে।
আর এই আন্দোলনটি এমন সময় জোরদার হয়েছে যখন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন দল বিজেপি’র সভাপতি অমিত শাহ দেশের প্রধান ভাষা হিসাবে হিন্দিকে তুলে ধরার কথা বলেছেন।
দক্ষিণ ভারতের প্রায় সবকটি রাজ্যেই হিন্দীর বিরুদ্ধে প্রবল জনমত রয়েছে দীর্ঘদিন ধরেই। ওইসব রাজ্যে খুব কম মানুষই হিন্দী বোঝেন, কিংবা বুঝলেও অনেকটা আদর্শগতভাবেই হিন্দী বলেন না। তাই তামিলনাডু, কেরালা বা কর্ণাটকের মতো রাজ্যগুলো থেকে যে হিন্দীকে প্রধান ভারতীয় ভাষা হিসাবে তুলে ধরার প্রচেষ্টার বিরোধিতা হবে, তা হয়তো স্বাভাবিক। তবে নিজেদের ভাষা-সংস্কৃতি নিয়ে গর্ব থাকলেও বাংলাকে হিন্দী নিয়ে প্রতিবাদে সরব হতে খুব একটা দেখা যায়নি।
বরং অনেক সময়েই দুই বাঙালিকে নিজেদের মধ্যে হিন্দিতে কথা বলতে শোনাও যায়। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে এখন অনেকেই মনে করছেন হিন্দী ভাষার আগ্রাসন হচ্ছে এবং এর একটি রাজনৈতিক দিকও রয়েছে – ফলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলার পক্ষে ক্যাম্পেইন চলছে, আর প্রতিবাদ হচ্ছে রাস্তার বিক্ষোভ-জমায়েতে। কলকাতার কলেজ স্ট্রিট কফি হাউসের সামনে কয়েকদিন আগে এরকমই একটা জমায়েত হয়েছিল ভাষা-সংস্কৃতি কর্মীদের, যেখানে জোর করে হিন্দী চাপিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়া হয়েছে।
ওই জমায়েতের মূল সংগঠন অধ্যাপক ইমানুল হক দীর্ঘদিন ধরেই মাতৃভাষা নিয়ে আর বাংলার সংস্কৃতিকে ধরে রাখার জন্য আন্দোলন চালাচ্ছেন। তিনি বলছিলেন, “আমরা যদিও দীর্ঘদিন ধরেই মাতৃভাষা নিয়ে আন্দোলন করছি, কিন্তু এখন অনেকেই আমাদের মাতৃভাষার ওপরে কোনও রকম আঘাত এলেই যে সরব হচ্ছেন, তার একটা কারণ নিঃসন্দেহে আছে”।
অধ্যাপক হকের সতর্কবার্তা, “নিজেদের মাতৃভাষা নিয়ে গর্বিত হয়ে প্রতিবাদে সামিল হওয়ার অর্থ কিন্তু এটা নয় যে অন্যের মাতৃভাষাকে অসম্মান করব।” বিশ্লেষক আর অ্যাক্টিভিস্টরা মনে করছেন সারা দেশের ওপরে হিন্দী চাপিয়ে দেওয়ার পিছনে একটা নির্দিষ্ট রাজনীতি রয়েছে। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ বা আরএসএস-এর ভাবাদর্শ – যেখানে হিন্দী, হিন্দু ধর্ম আর হিন্দুরাষ্ট্র – এই তিনটি বিষয়কেই সমার্থক করে তুলে ধরার চেষ্টা হয়। কিন্তু সেটা হতে দেওয়া যাবে না। এখন যেমনটা আছে, তেমনভাবেই চলবে সব, দাবি ইমানুলের।