হিন্দু ছাড়া অন্য সব ধর্মের ওপরেই যে বিদ্বেষ পোষণ করে থাকে গেরুয়া শিবির এমন অভিযোগ বারংবার সামনে এসেছে। এবং তা প্রমাণিতও হয়েছে। এবার ফের প্রকাশ্যে এল বিজেপির ধর্ম নিয়ে রাজনীতির কারবার । বিজেপি নেতা সায়ন্তন বসু জানালেন, “মঙ্গল গ্রহ থেকে হিন্দুরা এলেও তাঁরা থাকার জায়গা পাবেন”।
বিজেপি নেতাদের সঙ্গে সাংগঠনিক বৈঠকে যোগ দিতে সোমবার আলিপুরদুয়ারে আসেন সায়ন্তন। মঙ্গলবার সেই বৈঠক শুরুর আগে দলের জেলা কার্যালয়ে সাংবাদিক বৈঠকে ওঠে এনআরসি প্রসঙ্গ। সায়ন্তন বলেন, “পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি হতেই পারে। কিন্তু এক জন হিন্দুর নামও তার থেকে বাদ যাবে না। সেই হিন্দু বাংলাদেশ থেকে আসুন, আফগানিস্তান থেকে কিংবা মঙ্গলগ্রহ থেকে আসুন।’’ একই সঙ্গে তিনি জানান, ‘‘তৃণমূলের বাধায় আটকে যাওয়া নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল আমরা রাজ্যসভায় পাশ করাব।” কিন্তু এনআরসি নিয়ে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে আলাদা নীতি কেন? সায়ন্তন অবশ্য বলেন, “এ নিয়ে আমাদের দলের কোনও দ্বিচারিতা নেই। কারণ, দেশটা ভাগ হয়েছিল ধর্মের ভিত্তিতে।”
সায়ন্তনের এই মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি মৃদুল গোস্বামী। তিনি বলেন, “ভারত ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। এখানে ধর্মের ভিত্তিতে কাউকে ভাগ করা যাবে না। কিন্তু বিজেপি নেতারা এ ধরনের অরুচিকর মন্তব্য করে দেশের ধর্মনিরপেক্ষতাকে আঘাত করার চেষ্টা করছেন।’’ তাঁর কথায়, ‘‘এনআরসি হলে হিন্দু বাঙালির নাম কাটা যাবে কিনা, তা আসামের তালিকাই প্রমাণ করে দিয়েছে। সেখানে যে সাড়ে উনিশ লক্ষ মানুষের নাম কাটা গিয়েছে, তার বেশির ভাগটাই হিন্দু বাঙালির।”
তবে যতই হিন্দুদের প্রাধান্য দেওয়ার কথা বলুক বিজেপি, আসামের সদ্য প্রকাশিত নাগরিক পঞ্জীতে যে ১৯ লক্ষ মানুষের নাম ওঠেনি তাঁদের মধ্যে বহু হিন্দু মানুষ আছেন। পড়শি রাজ্য আসামে এনআরসি চালু হওয়ার পরে পশ্চিমবঙ্গে নানা স্তরে সংশয় ছড়িয়েছে। কোচবিহার, আলিপুরদুয়ারের মতো সীমানাবর্তী জেলা বা মালদহ, দক্ষিণ দিনাজপুরের মতো বাংলাদেশ ঘেঁষা জেলাগুলিতে এই সংশয়ের মাত্রা কিছুটা হলেও বেশি। স্থানীয় লোকজনের দাবি, এর যথেষ্ট কারণও রয়েছে। প্রথমত, অসমে যে ১৯ লক্ষ লোকের নাম জাতীয় নাগরিকপঞ্জিতে ওঠেনি, তার মধ্যে নাকি বেশির ভাগই হিন্দু— এমন কথা ছড়িয়েছে এই সব জেলায়। দ্বিতীয়ত, অনেক গোর্খা এবং রাজবংশীদের নামও আসেনি ওই তালিকায়, বলছেন ওয়াকিবহাল মহলের লোকজন।