গত শনিবার হিন্দী দিবসের দিন, হিন্দীকে দেশের সাধারণ ভাষা করার পক্ষে জোর সওয়াল করেছিলেন তিনি। যা নিয়ে এখনও প্রতিবাদের ঝড় বইছে দেশ জুড়ে। তাঁর ‘এক দেশ, এক ভাষা’ তত্ত্ব নিয়ে বিরোধীদের পাশাপাশি মুখ খুলেছেন বাংলা এবং দক্ষিণের রাজ্যগুলির বিশিষ্ট জনেরাও। বাদ নেই, খোদ বিজেপি শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও। সেই রেশ কাটার আগেই এ বার ভারতে বহুদলীয় গণতন্ত্রের সাফল্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সংবিধান প্রণেতাদের এই সিদ্ধান্ত একেবারেই সন্তুষ্ট করতে পারেনি মোদী মন্ত্রিসভার নাম্বার টু-কে। গত কয়েক দশকে এই ব্যবস্থার ‘সাফল্যের হার’ দেখে তাকে ‘পাস মার্কস’টুকু দিতে নারাজ তিনি।
মঙ্গলবার দিল্লীতে ‘অল ইন্ডিয়া ম্যানেজমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন’-এর অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে শাহ বলেন, ‘স্বাধীনতার সাত দশক পর বহুদলীয় ব্যবস্থার সাফল্য নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। তাঁদের মনে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, বহুদলীয় গণতন্ত্র কি ব্যর্থ?’ বিভিন্ন দেশের সংবিধান এবং গণতন্ত্রিক ব্যবস্থা পর্যালোচনার পর এই ব্যবস্থাকে আপন করে নিয়েছিলেন ভারতীয় সংবিধানের প্রণেতারা। তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল, সবাইকে সমান সুযোগ পাইয়ে দেওয়া। এই স্বপ্ন কি সফল হয়েছে? শাহ মনে করেন, হয়নি। তাঁর কথায়, ‘সংবিধানের স্রষ্টারা যে ভারতের স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেটা কি এই ব্যবস্থা পূরণ করতে পেরেছে? হতাশা ছাড়া কিছুই মেলেনি।’
ফলে দেশে কি এবার এক ভাষার মতো এক দলীয় শাসনও চালু করতে চায় মোদী সরকার? নতুন করে এই প্রশ্নই তুলে দিয়েছেন শাহ। প্রসঙ্গত, আগাগোড়া বহুদলীয় গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় অবিশ্বাসী শাহ। গত লোকসভা ভোটের মুখে তাঁর উক্তি ছিল, ‘আগামী পঞ্চাশ বছর বিজেপি’র সরকার থাকবে।’ আর এবার সরাসরি স্বাধীনতা ইস্তক বলবৎ বহু দলের গণতন্ত্রের উপযোগিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পিছপা হলেন না তিনি। শাহর কথায়, ‘সংবিধান প্রণেতারা বিশ্বের নানা গণতন্ত্র নিয়ে গবেষণা করে বহু দলের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু করেছিলেন, যাতে দেশের উন্নতি হয়। দেশবাসী সমান অধিকার পায়, সমৃদ্ধ হয়।’
এখানেই না থেমে তিনি আরও বলেন, ‘ওঁদের আমলে দুর্নীতি, দেশের অসুরক্ষিত সীমান্ত, সৈনিকদের শিরশ্ছেদ, মহিলাদের নিরাপত্তাহীনতার খবর হত। মানুষ রোজ পথে নেমে প্রতিবাদ করতেন। কংগ্রেসের বিরুদ্ধে আক্রমণ আরও শানিয়ে ওদের সরকার নীতি পঙ্গুত্বের শিকার ছিল। কোনও সিদ্ধান্তও হত না। সবাই নিজেদের প্রধানমন্ত্রী মনে করতেন। আসল প্রধানমন্ত্রী যিনি, তাঁর দিকেই তাকাতেন না।’ উল্লেখ্য, নীতিগত ভাবে সঙ্ঘ ‘এক দেশ, এক ভাষা, এক ঝান্ডা এবং এক হিন্দু রাষ্ট্র’ গড়ার পক্ষে। তাদের দাবি, আঞ্চলিক দলগুলির কারণেই ‘বিভেদের রাজনীতি’ তৈরি হয়েছে। কেন্দ্রে একটি মাত্র দল থাকলে বিভেদ দূর করা সম্ভব।
ফলে রাজধানীতে জল্পনা, সঙ্ঘের সেই ইচ্ছাই কি ফুটে উঠল অমিত-মন্তব্যে? কারণ, আঞ্চলিক দলগুলি এমনিতেই অস্বস্তিতে। লালুপ্রসাদ জেলে। অখিলেশ-মায়াবতী নীরব। তদন্তের ফেরে চন্দ্রবাবু নায়ডুর দল। বিজেপির সঙ্গে বোঝাপড়ার রাস্তায় নবীন পট্টনায়ক। নীতীশ জোটে থেকেও অস্বস্তিতে। দক্ষিণে বিরোধী বলতে একমাত্র ডিএমকে। আর পশ্চিম থেকে একমাত্র আওয়াজ তুলছেন বাংলার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফলে অমিতের মন্তব্যে আঞ্চলিক দলগুলিকে কার্যত শেষ করে দেওয়ার ছক দেখছেন অনেকে।