গোটা কলকাতায় যে কটি হাতেগোনা শতাব্দী প্রাচীন বারোয়ারি দুর্গাপুজো এখনও হয়, তার মধ্যে অন্যতম সিকদার বাগান সাধারণ দুর্গোৎসবের পুজো। এ বছর ১০৭ তম বর্ষে পদার্পণ করল এই পুজো। বয়সের হিসেবে পুরনো পুজো হলেও সময়ের সঙ্গে সবই বদলায়। সেই বদলের হাত ধরেই সিকদার বাগানের পুজোয় এখন থিমের ছোঁয়া। তবে শুধু চমক দিতেই থিমের দৌড়ে সামিল হয়নি এই পুজোকমিটি। রীতিমতো মাথা ঘামিয়ে বানিয়েছে পরিবেশ রক্ষার পাঠ। পুরাকাল থেকেই মাকে প্রকৃতি রূপে কল্পনা করেছে মানুষ। এ বছর সেই প্রকৃতি মা-কে যত্নে রাখার পাঠ দেবে তারা। জলের অপচয় রোখার বার্তা দিতে এবার তাদের থিম ‘যত্নে রাখো রত্ন পাবে’।
সমগ্র ভাবনা এবং তার বাস্তবায়ন ঘটাতে ময়দানে নেমেছেন শিল্পী দ্বয় অরিন্দম-অভিজিৎ। বাঁশ, কাঠ, প্লাই দিয়ে নিজস্ব আঙ্গিকে তাঁরা সাজিয়ে তুলছেন মণ্ডপ। এ প্রসঙ্গে সিকদার বাগান সাধারণ দুর্গোৎসব কমিটির সম্পাদক গৌরিশঙ্কর রায়চৌধুরী এখন খবরকে জানান, “এ বছর আমাদের পুজো ১০৭ তম বর্ষে পদার্পণ করছে। এবারের থিম ‘যত্নে রাখো রত্ন পাবে’। সাম্প্রতিক কালে প্রায় গোটা বিশ্বজুড়েই জলের জন্য হাহাকার দেখা দিয়েছে। তাই জল সংরক্ষণের জন্য যে চেষ্টা চলছে সর্বত্র, তাকে কেন্দ্র করেই আমাদের এই থিম। মন্ডপ এবং প্রতিমা গড়ছেন শিল্পী দ্বয় অরিন্দম ও অভিজিৎ। বাজেট ১৬-১৭ লক্ষ টাকা।”
প্রসঙ্গত, দিন কয়েক আগেই এ খবর সামনে এসেছিল যে ব্যাঙ্গালোরের শহরাঞ্চলে জল পেতে কালঘাম ছুটেছে শহরবাসীর। জলের অভাবে মারাত্মক পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে সমগ্র দক্ষিণ ভারতকেই। পরিবেশবিদরা বলছেন, বিশ্ব উষ্ণায়নের জেরে আরও ভয়াবহ অবস্থা হবে দেশের। এখন থেকেই জলের অপচয় রুখতে না পারলে জলশূন্য ভবিষ্যতের মুখে পড়তে হবে দেশকে। এই আশঙ্কা থেকেই রাজ্যে ইতিমধ্যে ‘জল ধরো জল ভরো’ প্রকল্পের সূচনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে শেখানো হচ্ছে জল অপচয় রোধের পাঠ। সে কাজে এবার এগিয়ে এসেছে সিকদার বাগানও।
তবে থিমের চমকেও পুজোর কর্মকর্তারা হারিয়ে যেতে দেয়নি এ পুজোর সাবেকিয়ানাকে। মায়ের মুখের আদল বদলাতে রাজি নন তাঁরা। তাঁদের মতে, উত্তর কলকাতার সাবেকিয়ানাই এই পুজোর রসদ। এই পুজো আক্ষরিক অর্থেই উত্তরের ঐতিহ্য। গৌরিশঙ্কর বাবুদের কথায়, মা-কে তাঁর মতো করে থাকতে দিলে, সমস্ত নিয়মকানুন, আচার মেনে পুজো করলে, সেটাই হবে তাঁর যত্ন নেওয়া। আর যত্ন নিলেই যে মিলবে রত্ন, এবার তো সে কথাই বলছে সিকদার বাগানের থিম। তাই আশা করাই যাচ্ছে, প্রতিবারের মতো এবারও সিকদার বাগানের পুজো দেখতে দর্শনার্থীদের ঢল নামবে এই চত্বরে।