এক ধাক্কায় ১৯ লক্ষ মানুষ নিজভূমে পরবাসী। এনআরসির জেরে গোটা আসাম জুড়ে এখন তীব্র হাহাকার। ডিটেনশন শিবিরে যাওয়ার আতঙ্ক গ্রাস করছে সাধারণ মানুষকে। এরকমই চিন্তার মেঘ ঘনিয়েছে লুনা গোপের পরিবারে। বাবা এবং মেয়ের নাম নাগরিকপঞ্জীতে থাকলেও বাদ গেছে মায়ের নাম। নাগরিক পঞ্জিতে নাম নেই মা আরতি গোপের। তা হলে তাঁকেও কি নিয়ে যাওয়া হবে শিবিরে? সেই চিন্তায় রাতে ঘুম উড়ে গেছে ওই পরিবারের। মোদী সরকারের এক চরম ভুল পদক্ষেপের জেরে চরম দুর্দশার সম্মুখীন।
লুনা জানান, সব কাগজ দেওয়ার পরেও দু’দফায় পঞ্জী থেকে তাঁর মায়ের নাম বাদ গিয়েছে। আরতিদেবীর বাবা এবং মা-ও মেয়ের নাম পঞ্জিতে না ওঠায় উদ্বিগ্ন। মনোজবাবু বলেন, “যা যা নথি চেয়েছে, সব জমা দেওয়া হয়েছে। তার পরেও কেন বারবার নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে, তা বুঝতে পাচ্ছি না। এ বারে বলছে ফরেনার ট্রাইব্যুনালে মামলা করতে। তাতেও যদি নাম বাদ যায়, তা হলে কী হবে?”
লুনা ও তাঁর বাবা মনোজ গোপের নাম রয়েছে পঞ্জীতে। আরতিদেবীর নাম কেন উঠছে না, তাঁরা বুঝতে পারছেন না। আরতিদেবীর পরিবার কোচবিহারের বহু পুরনো বাসিন্দা। ১৯৭১ সালের আগের সেই নথি পেশ করেছেন তাঁরা। আরতিদেবীর বাবা সতীশচন্দ্র ঘোষ পশ্চিমবঙ্গে সরকারি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। ১৯৬৮ সালে স্কুলে যোগ দেন। আরতিদেবীর এক ভাইও এখন তুফানগঞ্জের একটি হাইস্কুলে শিক্ষকতা করেন। মনোজ-আরতির বিয়ে হয় ১৯৯১ সালে। সেই থেকেই বরপেটা রোডের বাসিন্দা আরতিদেবী।
এখন বরপেটা রোডের বাড়ি থেকে সবাই চলে এসেছেন বক্সিরহাটে। কিন্তু তাতেও শেষরক্ষা হবে কি না, জানেন না। এমন বয়সে এসে এই অবস্থার মধ্যে পড়তে হবে, কখনও কল্পনাতেও ভাবেননি আরতিদেবী। তাঁর কথায়, “ছেলেবেলা কেটেছে বক্সিরহাটে। এখানে পড়াশোনা করেছি। পরে বিয়ে হল অসমে। এখন আমাকে বিদেশি বলছে। এ সব কী হচ্ছে!