আকাশ পানে চাইলেই সাদা মেঘের ভেলা আর মাঠে-ঘাটে কাশ ফুলের মাথা দোলানো জানান দিচ্ছে যে আর বেশিদিন বাকি নেই। এবার ঘরের মেয়ে উমার ঘরে ফেরার সময় হয়েছে। তাই শহরজুড়ে পুজোর প্রস্তুতি এখন তুঙ্গে। সেই প্রস্তুতিতে পিছিয়ে নেই চোরবাগান সর্বজনীন-ও। বছর কয়েক আগেও এ পুজোয় দর্শনার্থীদের ঢল তেমন চোখে পড়ত না। কিন্তু বিগত তিন বছরে নিজেদের মন্ডপ থেকে শুরু করে প্রতিমায় আমূল পরিবর্তন ঘটিয়ে চোরবাগান সার্বজনীন এখন উত্তর কলকাতা তথা শহরের অন্যতম নামকরা পুজো। এই বছর ৮৪-তম বর্ষে পা দিল এই পুজো।
প্রতি বছরই নিত্য নতুন ভাবনা নিয়ে আসে চোরবাগান সর্বজনীন। এ বছরও তাদের ব্যানার দেখে চমকে উঠেছিলেন সকলে। কারণ তাতে লেখা, ‘সবাইকে বলো এবার আমাদের ১৫ লাখ’। তবে কি পুজো মন্ডপে গেলেই ১৫ লাখ পাওয়া যাবে! না, সেরকমটা নয়। আসলে চোরবাগানের মন্ডপ তৈরি হচ্ছে প্রায় ১৫ লক্ষ ধুঁদুল দিয়ে। বাংলার অতি পরিচিত একটি প্রাকৃতিক জিনিস হল এই ধুঁদুল। এবার তাদের মন্ডপে ধুঁদুলের ব্যবহার করেই পরিবেশ বান্ধব পুজো করবে চোরবাগান সর্বজনীন। থিমের নাম ‘দৃষ্টি থাক সৃষ্টিতে’।
চোরবাগান সর্বজনীনের সম্পাদক জয়ন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় এখন খবরকে বলেন, “এ বছর আমাদের পুজো ৮৪ তম বর্ষে পা দিল। আমরা থিম পুজো করছি বছর তিনেক ধরে। গত বছর আমাদের থিম ছিল ‘বিলীন’। যার জন্য এশিয়ান পেইন্টস-সহ মোট ৪৭টা পুরষ্কার পেয়েছিলাম আমরা। এবারে আমাদের থিম হচ্ছে ‘দৃষ্টি থাক সৃষ্টিতে’। তবে আমরা তিন বছর ধরেই যেটা করছি, কোনও পরিবেশ বান্ধব জিনিসই মন্ডপে ব্যবহার করছি। আমরা মন্ডপে না কোনও রঙ, আর না-ই কোনও কেমিক্যাল ব্যবহার করি। এবার যেমন আমাদের মন্ডপ তৈরি হচ্ছে ১৫ লাখ ধুঁদুল দিয়ে। বাজেট আনুমানিক ৫০-৬০ লাখ।”
তাঁর কথায়, ‘প্রকৃতি নিজের খেয়ালে যা সৃষ্টি করে, আমরা এবার তা সকলকে দেখানোর চেষ্টা করছি। গতবারের মতো এবারও মন্ডপ শিল্পী দেবতোষ কর। আলো করছেন দীনেশ পোদ্দার। এবং আবহ করছেন দেবজ্যোতি মিশ্র।’ জয়ন্ত বাবু এ-ও জানান, মেদিনীপুরের বইতা, ভদ্রক-সহ নানা জায়গা থেকে এই ১৫ লাখ ধুঁদুল সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রায় ১০০ টি ঘরের মহিলারা এই ধুঁদুল কেটে পাঠাচ্ছেন। মন্ডপেও কাজ করছেন ৬০-৭০ জন শিল্পী।
তবে কোনও যন্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে না। যা করা হচ্ছে সবটাই হাতে। পুরোটাই হস্তশিল্প। চোরবাগানের ব্যানার দেখে ইতিমধ্যেই প্রায় সবাই জেনে গিয়েছেন ‘এবার তাদের ১৫ লাখ’, ফলে এই পুজো দেখতে যে লাখ লাখ মানুষ ভিড় জমাবেন, তা বলাই বাহুল্য।