তখন ক্লাসরুমে বসে মন দিয়ে পড়াশোনা করছে ছাত্ররা। তবে বই-খাতা-পেন্সিল নিয়ে নয়, তাঁদের সকলের হাতে ধরা একটি করে ছাতা! ঝাড়খণ্ডের ঘোড়াবাঁধা এলাকায় মুরেঠাকুরা গ্রামের সরকারি স্কুলে গেলে, এই দৃশ্যই চোখে পড়বে আমার, আপনার, সবার। কিন্তু এতে পড়াশোনার মানোন্নয়ন আদৌ কি সম্ভব! কচি-কচি হাতগুলো তো ছাতা সামলাতেই ব্যস্ত, পড়াশোনা কী করবে!
অথচ অন্য উপায়ও নেই। এই ভরা বর্ষায় রোজই বৃষ্টি। আর বৃষ্টি পড়লেই স্কুলের ভাঙা ছাদ থেকে জল পড়ে মাথায়। ফলে ছাতা মাথায় দিয়ে বসা ছাড়া অন্য উপায় নেই ছাত্রছাত্রীদের। আর এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই যেন আরও এক বার নগ্ন হয়ে গেল এ দেশের শিক্ষাব্যবস্থার কঙ্কালসার দশা। যেখানে স্কুলবাড়ির মাথার ছাদটুকুও ঠিকঠাক নয়, সেখানে যে পড়াশোনার পরিবেশ খুব ভাল হবে না, তা খুব ভালোভাবেই স্পষ্ট।
অভিযোগ, স্কুল কর্তৃপক্ষ ছাদ সারাতে উদ্যোগী নন। বাচ্চাদের ছাতা মাথায় দিয়ে বসেই কাজ চলে যেতে পারে বলে দাবি তাঁদের। শুধু তা-ই নয়। বিল্ডিংয়ের এই বেহাল দশার জন্য বিদ্যুৎ সংযোগও নেই স্কুলে। রতিকান্ত প্রধান নামের এক শিক্ষক বলেন, “দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য আমরা বিদ্যুতের লাইন কেটে দিয়েছি। সরকারকে বলেছি, এ বিষয়ে উদ্যোগ নিতে।”
কিন্তু অভিভাবকদের অভিযোগ, সরকার কবে ব্যবস্থা নেবে তা কেউ জানে না। শুধু জল পড়ার সমস্যাই নয়,ছাদগুলির অবস্থা এমনিতেও বেশ খারাপ। সাতটি ক্লাসরুমের মধ্যে মাত্র তিনটিতে ক্লাস করা যায়, তা-ও ছাতা মাথায় দিয়ে। যে কোনও সময়ে ভেঙে পড়তে পারে চাঙড়। বাকিগুলিতেও যে কোনও সময়ে ভেঙে পড়তে পারে চাঙড়।
ক্লাস সেভেনের এক ছাত্র বলছিল, “জলে বইখাতা ভিজে যায়। এই বর্ষাকালটা খুব অসুবিধা হয় আমাদের। ছাদ থেকে এত জল পড়ে যে ছাতা খুলে ক্লাসে বসে থাকতে হয়। এরকম ভাবে পড়াশোনা হয় না।” একই সুর বাকিদের গলাতেও। ১৭০টি ছাত্রছাত্রী সকলে মিলে এ বিষয়ে সরকারকে জানিয়েছে বলেও দাবি করেছেন কর্তৃপক্ষ।
ছাতা মাথায় দিয়ে ক্লাস করার ছবি সামনে আসার পরেই নেটিজেনদের মধ্যে শোরগোল পড়ে গেছে। কেউ বলছেন, এই দেশে যে স্কুলছুটের হার বেশি হবে, তাতে আর আশ্চর্যের কী। কেউ বলছেন, ছোটছোট হাতগুলোয় এখন কেবল পেন-পেন্সিল থাকার কথা। ছাতা ধরতে হচ্ছে পরিকাঠামোর অভাবে। শিক্ষাখাতে সরকারি অনুদানের সঙ্কোচনের দিকেও আঙুল তুলেছেন অনেকে।