বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে পুজোর গন্ধ। চলছে শেষ মুহূর্তের কেনা কাটা। পুজো উদযাপনের অন্যতম অঙ্গ হল খাওয়াদাওয়া। রোজকার ডাল-ভাতের নিয়ম বদ্ধতা থেকে বেরিয়ে মনপসন্দ বিভিন্ন পদে রসনা তৃপ্তি। পুজোর এই চারটে দিনে নিজের পছন্দের খাবার খেতে সব বাঙালিই চায়। আর বাঙালির খাওয়ার সঙ্গে বাঙালিয়ানা, নস্ট্যালজিয়া ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে।
এখন মোটামুটি তৃতীয়া বা চতুর্থী থেকে পুজো শুরু হলেও পুজোর আমেজ ফুটে ওঠে মূলত সপ্তমী থেকেই। সপ্তমীর দুপুরের খাবারের পরতে পরতে জড়িয়ে থাক বাঙালিয়ানা। আর বাঙালির খাবার মানেই পঞ্চব্যঞ্জন সাজিয়ে পাত পেড়ে খাওয়া। মালকোঁচা করে ধুতি, গরদের পাঞ্জাবি, ফুলতোলা আসন আর কানা উচু কাঁসার থালায় গরমাগরম বাঙালি পদ। বাঁশকাঠি চালের ভাত, শুক্তো, কাজু-কিশমিশ দিয়ে ঘন করে মুগের ডাল, তপসে মাছ ভাজা, আলু-ফুলকপির ডালনা, চিংড়ি মাছের মালাইকারি, কাতলা মাছের কালিয়া, খাসির মাংস, টমেটোর চাটনি এবং এক খিলি মিষ্টি পান… ভুলে যান সাহেবি কায়দা, ভুলে যান চেয়ার-টেবিল। বাবু হয়ে মাটিতে বসে কবজী ডুবিয়ে নস্ট্যালজিয়ার আস্বাদ গ্রহণ করুন। এই সপ্তমী হোক অন্যান্যবারের তুলনায় একদম আলাদা।
অস্টমী মানেই অঞ্জলী। নিজের পছন্দ মত সাজে মায়ের কাছে পুজো দিয়ে ঘুরে ফিরে এবার পেট ভরানোর পালা। অস্টমীর দিন আজও অনেকেই নিরামিশ খাবার খান। অস্টমীর দুপুরে সঙ্গী হোক গরমাগরম লুচি, আলুর দম, ধোঁকার ডালনা, ছানার কোপ্তা কারী এবং ঘন পায়েস। যেহেতু পুজো, তাই বিশ্রাম বলে কোনও শব্দ ওই কটা দিন ভুলে যায় সকলেই। তাই খেয়ে নিয়েই বেড়িয়ে পড়ুন উত্তর বা দক্ষিণ, বা যেদিকে আপনার মন চায়। আর অস্টমীর রাতে যদি আপনার হাতে থাকে আপনার সঙ্গীর হাত তাহলে পুজো এবার আপনারই…
নবমীর সকাল থেকেই কোথাও একটা বিষাদের সুর বাজতে থাকে মনের মধ্যে। রাত পোহালেই মায়ের বিদায়। ফের একটা বছরের অপেক্ষা। তবে মন খারাপ যতই হোক, পেটপুজোয় কমতি হলে চলবে না। নবমীর দুপুরে সঙ্গী হোক বাসন্তী পোলাও, মাটন কোর্মা। এই দুটি খাবার আজও বাঙালির বড্ড প্রিয়। নবমীর দুপুরে এই পদগুলির সঙ্গে বারবার ফিরে আসুক ঠাকুমা-দিদিমার হাতের ছোঁয়া। বাসন্তী পোলাও ঝরঝরে করার রেসিপি তো তারাই বংশ পরম্পরায় শিখিয়ে গেছেন মেয়েকে, নাতনিকে, বৌমাকে…
দশমী মানেই মিষ্টিমুখের পালা। মাকে বরণ করে এসে বিজয়া পালন মানেই নানারকম মিস্টির সমাহার। বিজয়া উদযাপনে যদি সঙ্গীন হয় রসমালাই, আম সন্দেশ, ক্ষীর কদম, সরভাজা, মনোহরা ইত্যাদির মত পুরনো মিষ্টি তাহলে কিন্তু মন্দ হয়না তাই না?
আসলে পুজো মানেই তো খুশি, আনন্দের আবহে গা ভাসানো। তাই মন খুলে এই আনন্দের অংশীদার হোন। জমিয়ে পেট পুজো করুন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।