ভূস্বর্গের ঘুম ভাঙছে ভারী বুটের আওয়াজে। বিশেষ মর্যাদা হারিয়ে শুধু রাজনৈতিকভাবে নয়, পুজোর আগে পর্যটনেও বড়সড় ধাক্কা খেয়েছে কাশ্মীর। অশান্ত উপত্যকা থেকে মুখ ফেরানো শুরু হয়ে গিয়েছে পর্যটকদের। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে এবার পুজোয় পর্যটকশূন্য হয়ে পড়ার আশঙ্কা দানা বেঁধেছে ঝিলাম নদী থেকে ডাল লেকে। ৩৭০ ধারা অবলুপ্তির পরে উপত্যকার যে পরিস্থিতি হয়েছে তাতে করে পুজোর ছুটি কাটাতে কাশ্মীর যাওয়ার সাহস কেউ দেখাচ্ছেন না। পর্যটনই তো মূল জীবিকা ছিল কাশ্মীরের, সেই রুজিতেই টান পড়ায় মন খারাপ ভূ স্বর্গের।
ডাল লেকের ধারে কি এবার পুজোয় পর্যটকদের ভিড় দেখা য়াবে? এই প্রশ্ন শুধু কাশ্মীরের পর্যটন ব্যবসাযীদের নয়, পশ্চিমবঙ্গের টুর অপারেটরদেরও। কেন্দ্রের পদক্ষেপে ৩৭০ অনুচ্ছেদ খারিজ হতেই বিশেষ মর্যাদা হারিয়েছে উপত্যকা। আর এর জেরেই পালটে গিয়েছে কাশ্মীর-পর্যটন পরিস্থিতি। অশান্ত হয়ে ওঠা ভূস্বর্গের পরিস্থিতি যে সহজে স্বাভাবিক হবে না, বুঝতে পারছেন পর্যটকরাও। তাই কেন্দ্রের পদক্ষেপের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে পুজোর বুকিং বাতিল। পরিস্থিতিতে উদ্বেগ ছড়িয়েছে পর্যটন ব্যবসায়ীদের মধ্যে। তাঁদের বক্তব্য, প্রতি বছরই বেড়ানোর জন্য দার্জিলিং পাহাড়ের পাশাপাশি কাশ্মীর উপত্যকা বেছে নেন বাঙালি পর্যটকরা। এ বছরও প্রচুর পর্যটক হোটেল, রিসর্ট বুকিং করে রেখেছিলেন। কিন্তু যা পরিস্থিতি, কতজন পর্যটক কাশ্মীর যাবেন, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। পুজোর সময় জম্মু ও কাশ্মীরে যত বাঙালি পর্যটক য়ান, তাঁদের সিংহভাগই দক্ষিণবঙ্গের। ফলে কলকাতাকেন্দ্রিক টুর অ্যান্ড ট্রাভেলস এজেন্সিগুলি বর্তমান পরিস্থিতিতে চরম সমস্যায় পড়েছেন। এমনই একটি সংস্থা চালান বাচ্চু চৌধুরি। তিনি বলেন, সোমবার পরিস্থিতি নিয়ে অনেকেই খোঁজ নিচ্ছিলেন। মঙ্গলবার থেকে বুকিং বাতিল শুরু হয়ে গিয়েছে। দিনে কতজন যে বুকিং বাতিল করেছেন, তার হিসেব নেই। গত ১০ বছরে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়নি।
সোনারপুরের টুর অপারেটর লিলি চৌধুরির বক্তব্য, কয়েদিন আগে অমরনাথ অশান্ত হয়ে উঠতেই উদ্বেগ ছড়িয়েছিল পর্যটকদের মধ্যে। কেন্দ্রীয় সরকার ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করায় কেউ আর উপত্যকায় যাওয়ার সাহস দেখাতে চাইছেন না। ফলে বুকিং বাতিল শুরু হয়ে গিয়েছে। জানি না শেষ পর্যন্ত কী হবে। কাশ্মীর নিয়ে যখন আশঙ্কার কালো মেঘ, তখন আশার আলো দার্জিলিং পাহাড়ে। ভূস্বর্গের পরিস্থিতিতে দার্জিলিংকে পুজোর সময় পর্যটকরা বেছে নেবেন বলে মনে করছেন পাহাড়-সমতলের পর্যটন ব্যবসাযীরা। লোকসভা নির্বাচনের সময় কিছুটা হলেও উপত্যকা অশান্ত হয়ে উঠেছিল, যার প্রেক্ষিতে অনেক পর্যটকই দার্জিলিংকে বেছে নিয়েছিলেন।
উপত্যকায় বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের পর কেটে গেছে ৪০ দিন। কিন্তু এখনো স্বাভাবিক হল না জম্মু-কাশ্মীরের পরিস্থিতি। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে শুক্রবার নতুন করে বেশ কিছু এলাকায় নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। হজরতবল এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
শাটডাউনের জেরে গত ৪০ দিনে জম্মু কাশ্মীরের অর্থনীতিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছে বণিক মহল। বণিক সংগঠন কাশ্মীর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার। সংগঠনের প্রেসিডেন্ট শেখ আশিক আহমেদ বলেন, “লকডাউনের জেরে কাশ্মীরে প্রতিদিন গড়ে ১০০ থেকে ১২০ কোটি টাকার লোকসান হচ্ছে। পর্যটন শিল্প এবং হস্তশিল্পের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে। এই ক্ষতি শুধু এখন নয়। আগামী বছরগুলোতেও এর প্রভাব পড়বে”। সব মিলিয়ে পুজোর আগে শুধু মন খারাপ নয়, মাথায় হাত সেখানকার মানুষদের। তবে আশা ছাড়ছেন না কাশ্মীরিরা। হারাচ্ছেন না মনের জোর। তাঁরা ভরসা রাখছেন ঠিক বদলে যাবে এই অস্থির পরিস্থিতি।পর্যটকরা ফের কাশ্মীরে আসবেন। ফের শান্তির সূর্য উঠবে ভূস্বর্গের আকাশে।