দক্ষিণ কলকাতার উল্লেখ্যযোগ্য পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম বালিগঞ্জ কালচারাল এ্যাসোসিয়েশন। পরিচালক সুজয় ঘোষ তাঁর বিখ্যাত হিন্দি ছবি ‘কাহানী’র শ্যুটিংয়ের জন্য বেছে নিয়েছিলেন এই পুজোকেই। এ বছর ৬৯তম বর্ষে পা দিল বালিগঞ্জ কালচারালের পুজো। প্রতি বছরের মতো এবারও এক নতুন ভাবনা নিয়ে হাজির তারা। গত বছর তাদের থিম ছিল ‘মেয়ে এসেছে উলু দে, শোলার সাজে সাজিয়ে দে’। আর এবার তাদের থিম ‘যুগলবন্দী’। সমগ্র ভাবনা এবং মন্ডপ সৃজনে রয়েছেন শিল্পী বিমান সাহা। এবং প্রতিমা গড়ছেন ভাস্কর অরুণ পাল।
বালিগঞ্জ কালচারালের ভাইস প্রেসিডেন্ট দেবু বোস বলেন, ‘১৯৫০ সালে শুরু হয় আমাদের পুজো। এবারে ৬৯ বছরে পা দিচ্ছে। এবার আমরা মূলত বাঁশের কাজ করছি। বাজেট ৭০ লাখেরও বেশি। বিভিন্ন ধরনের বাঁশ আছে এখানে। আমাদের যা কিছু কাজ হচ্ছে তা আসলে বাঁশ আর কিছু লোহা, মানে পুরোনো মরচে ধরা লোহা দিয়েই। লোহা আর বাঁশ- দুটোর মেলবন্ধন ঘটিয়েই আমাদের এবারের থিম। এটাকে আমরা যুগলবন্দী বলছি।’
শিল্পী বিমান সাহা বলেন, ‘এখানের থিম যুগলবন্দী। লোহা-বাঁশের যুগলবন্দী ঘটিয়েই মন্ডপের কাজ করা হচ্ছে। মোট ৭ রকমের বাঁশ ব্যবহার করেছি আমরা। তারমধ্যে মাকলা বাঁশ আছে, বড়া বাঁশ আছে; আবার দার্জিলিং ও আসাম থেকে আনা হয়েছে কোকো বাঁশ। রয়েছে মুলি বাঁশ, তলতা বাঁশ আর জাভা বাঁশও। এই তলতা ও জাভা বাঁশগুলি দিয়ে নানা ধরণের স্কাল্পচার করা হয়েছে। আর বড় কোকো বাঁশগুলির মধ্যে ফুটো করে করে বিভিন্ন ধরণের মোটিফ করা হয়েছে। যেগুলিতে আলো পড়লেই ঝলোমল করে উঠবে। মুলি বাঁশকে ফাটিয়েও তা দিয়ে বিভিন্ন স্কাল্পচার করা হয়েছে। যেটা এ বছর এখানের মূল আকর্ষণ হতে চলেছে।’
শিল্পীর কথায়, ‘বালিগঞ্জ কালচারালে আমি বিগত ৪ বছর ধরে কাজ করছি। প্রতিবারই এখানে বাংলার হারিয়ে যাওয়া শিল্পকে তুলে ধরা হয়। গত বছর যেমন শোলা শিল্পকে তুলে ধরা হয়েছিল। তার আগে টেরাকোটা। এভাবে বাঁশের কাজও ক্রমশ বাংলা থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে। শিল্পীরা এখন কেউ বাঁশের কাজ করতে চাইছেন না, কারণ সেখান থেকে তেমন লাভ হচ্ছে না। তাঁরা বেশিরভাগই এই কাজ ছেড়ে অন্য কাজে ঢুকে যাচ্ছেন।
এখানেও যে শিল্পীরা এসেছেন, তাঁরা সারাবছরই এখানে ওখানে দিনমজুরি করেন। তাই তাঁদের নিয়েই প্রায় ৬ থেকে ৭ হাজার বাঁশ ব্যবহার করে এক নতুন ধরণের কাজ করা হচ্ছে। যাতে হারিয়ে যাওয়া শিল্পটাকে পুনরুদ্ধার করা যায়।’
–নিজস্ব চিত্র