গুজরাত যেন ক্রমেই জালিয়াতদের গড় হয়ে উঠছে। বছর দুয়েক আগেই এ রাজ্যের দুই হীরে ব্যবসায়ী মেহুল চোকসি-নীরব মোদী পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকার ব্যাঙ্ক জালিয়াতি করে দেশ ছেড়ে পলাতক। আর এবার দেশ ছাড়তে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়ল আরেক জালিয়াত। স্বপ্ন ছিল মার্কিন মুলুকে গিয়ে চাকরি করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করবেন। কিন্তু সেই স্বপ্ন দিল্লী বিমানবন্দরেই শেষ হয়ে গেল জয়েশ প্যাটেলের(৩২)। গুজরাতের আমেদাবাদের ওই যুবক বৃদ্ধ সেজে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। বিমানবন্দরে প্রাথমিক নিরাপত্তা বলয় পেরিয়েও যান তিনি। কিন্তু বিমানবন্দরের নিরাপত্তা কর্মীদের কড়া নজর শেষ পর্যন্ত তাঁর জালিয়াতি ধরে ফেলে।
জানা গেছে, বিদেশ যাওয়ার জন্য এক এজেন্টকে ধরেছিলেন জয়েশ। চুক্তি হয়, ওই এজেন্ট প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র জোগাড় করে দেবেন, বদলে জয়েশ আমেরিকায় গিয়ে তাকে ৩০ লক্ষ টাকা পাঠাবেন। সেই মতো এজেন্ট নকল পাসপোর্ট, ভিসা সব জোগাড় করে ফেলেন। সবই পরিকল্পনামাফিক চলছিল। রবিবারই দিল্লী থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উড়ে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। তাই তার আগে জয়েশকে দিল্লির একটি হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে মেকআপ আর্টিস্ট অপেক্ষা করছিলেন তাঁদের জন্য। হোটেলের রুমে ৩২ বছরের জয়েশ পটেল পাল্টে যান ৮১ বছরের অমৃক সিংহে। চুল, দাড়ি সব সাদা রং করা হয়। পরানো হয় পাগড়ি ও একটি জিরো পাওয়ারের চশমা।
আপাত ভাবে দেখলে তাঁকে বৃদ্ধের সাজে বেশ ভালই মানিয়েছিল। কিন্তু বিপত্তি হল গায়ের রঙে। প্রথম সিকিউরিটি চেক পয়েন্ট পেরিয়ে যান অমৃক ওরফে জয়েশ। তাঁকে একটি হুইল চেয়ারে বসিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁকে অসুস্থের মতো অভিনয় করতে বলা হয়, যেন তিনি হাঁটতে পারেন না ঠিকঠাক। সেই মতোই অভিনয় করে যাচ্ছিলেন। কিন্তু দ্বিতীয় সিকিউরিটি চেকের সময় নিরাপত্তা কর্মীদের সন্দেহ হয়। তাঁরা দেখেন মুখের রঙের সঙ্গে হাতের রং মিলছে না। ৮১ বছর বয়সী এক বৃদ্ধের মুখে বা শরীরে যে বলিরেখা থাকার কথা তাও নেই। সেই সঙ্গে গলার স্বরও মোটেই ৮১ বছরের মতো লাগছে না।
এরপরই জয়েশকে আলাদা করে নিয়ে গিয়ে খুঁটিয়ে পরীক্ষা করতেই ধরা পড়ে যায় সব কিছু। বোঝা যায় সবটাই মেকআপের কেরামতি! তাঁর বিরুদ্ধে আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। সেই সঙ্গে খোঁজ চলছে তাঁর সেই এজেন্ট এবং মেকআপ আর্টিস্টেরও। এই ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আসতেই চক্ষু চড়কগাছ নেটিজেনদের। সোশ্যাল মিডিয়ায় এ নিয়ে নানারকম মন্তব্যও দেখা যাচ্ছে। কেউ কেউ যেমন বলছেন মোদীর গড় এখন জালিয়াত গড়ার কারখানায় পরিণত হয়েছে।