মোদী সরকারের ‘প্রতিশ্রুতি’র ওপর দিনে দিনে ভরসা হারাচ্ছেন দেশবাসী। অধিকাংশ প্রতিশ্রুতিই বাস্তবায়ন হয়নি। তাই যতই সরকার মুখে বলুক ব্যাঙ্ক সংযুক্তির ফলে ব্যাঙ্ককর্মীদের ছাঁটাই হবেন না। তাতেও আশ্বস্ত নন কর্মীরা। দিনে দিনে তাঁদের মধ্যে বাড়ছে ক্ষোভ। চাকরি যাওয়ার আতঙ্কে উড়ে গেছে রাতের ঘুম। এমনিতেই দেশের অর্থনীতি নুইয়ে পড়েছে। ঝাঁপ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বহু কোম্পানির। ছাঁটাইয়ের রোষে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে বেকারত্ব। তারফলেই সরকারি ব্যাঙ্ককর্মীদের কপালে পড়ছে গভীর চিন্তার ভাঁজ।
প্রসঙ্গত, ব্যাঙ্ক পরিষেবাকে চাঙ্গা করতে, ঋণদানের ক্ষমতা বাড়াতে সম্প্রতি ১০টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ককে সংযুক্ত করে ৪টিতে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষও এই সরকারি সিদ্ধান্ত মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে। স্রেফ গুজরাটেই ১০টি ব্যাঙ্কের সংযুক্তিকরণে ৩০০ শাখায় ঝাঁপ পড়বে। সারা দেশে ৩ হাজার কর্মী কর্মহীন হয়ে পড়বেন। এমন আশঙ্কা দেখা দিয়েছে রাতারাতি।
মহাগুজরাট ব্যাঙ্ক এমপ্লিয়জ অ্যাসোসিয়েশন (এমজিবিইএ)–এর সাধারণ সম্পাদক জনক রাওয়াল বলেছেন,‘সরকারেরই স্বীকারোক্তি যে স্টেট ব্যাঙ্কের সঙ্গে অন্য ব্যাঙ্কের সংযুক্তিতে ৬,৩৫০ চাকরি গেছে। আর ৬ মাসের মধ্যে দেনা ব্যাঙ্ক, বরোদা ব্যাঙ্কেও অনেকে চাকরি হারাবেন। আরও ১০টি ব্যাঙ্ক সংযুক্তির ফলে আরও কর্মসংস্থান হারানোর আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে, সরকার যতই আশ্বাস দিক।’ রাওয়াল জানিয়েছেন, শুধু গুজরাটে সংযুক্ত হওয়া ব্যাঙ্কের ৩০০ জন কর্মী ছাঁটাই হবেন। সারা দেশে কর্মহীন হবেন ৩ হাজার! আসলে অনাদায়ী ঋণ, আর্থিক বৃদ্ধিহারের হ্রাসের মতো ঘটনা ধামাচাপা দিতে, সেইদিক থেকে জন সাধারণের দৃষ্টি ফেরাতে ব্যাঙ্ক নিয়ে সরকারের এই নতুন ফিকির। এহেন মন্তব্য করে রাওয়াল বলেছেন,‘দেশ গুরুতর অর্থনৈতিক সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। আর্থিক বৃদ্ধি থিতিয়েছে। তাই অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে ব্যাঙ্কে হাত পড়েছে। কারণ ব্যাঙ্কে মোটা টাকার জোগান আছে। সদ্য গত সপ্তাহে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। ব্যাঙ্ক সংযুক্তি এবং বন্ধ করা সেই সব কাজ থেকে নজর ঘোরাতেই।’
পরে এক বিবৃতিতে ‘এমজিবিইএ’ জানায়, ব্যাঙ্কে যা সব সমস্যা চলছে, সংযুক্তিকরণ তার দাওয়াই হতে পারে না। ২০১৮-১৯–এ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলো মোট ১,৫০,০০০ কোটি টাকা মুনাফা হয়েছে। তবে ২,১৬,০০০ কোটি টাকা অনাদায়ী ঋণের কারণে মোট ৬৬,০০০ কোটি টাকা ক্ষতিও হয়েছে। এই পরিসংখ্যানের প্রকাশের পর রাওয়ালের প্রশ্ন,‘এরপরেও কি বিশ্বাসযোগ্য যে ব্যাঙ্কের সংযুক্তিতে এমন বিশাল অঙ্কের কর্পোরেট ঋণ আদায় হবে? বরং দেখা গেছে যে স্টেট ব্যাঙ্কের সংযুক্তির পর তাদের অনাদায়ী ঋণের পরিমান বেড়েছে।’ চাকরি যাওয়ার আতঙ্কে ত্রস্ত দেশবাসী। কাদের গলায় পড়তে চলেছে কোপ তাই নিয়েই ভয়ে কাঁটা হয়ে আছে দেশের কর্মীবৃন্দ।