আজ ফের কলকাতা লীগের লড়াইয়ে নামছে কিবু ভিকুনার সবুজ-মেরুন ব্রিগেড। ২ দিন আগেই কল্যাণী স্টেডিয়ামে ভবানীপুরের বিরুদ্ধে ম্যাচ জিতে কলকাতা প্রিমিয়ার লিগের খেতাবি দৌড়ে প্রত্যাবর্তন করেছে মোহনবাগান। কিন্তু সেই ম্যাচের আটচল্লিশ ঘণ্টার মধ্যেই মোহনবাগান শিবির থেকে উধাও স্বস্তি। আজ জর্জ টেলিগ্রাফের বিরুদ্ধে ম্যাচের আগে কোচ কিবু ভিকুনার উদ্বেগের কারণ একাধিক। প্রথম কারণ যদি হয় কল্যাণীতে আগের ম্যাচে মোহনবাগানের জয়ের অন্যতম নায়ক রোমারিয়ো জেসুরাজের কার্ড সমস্যায় ছিটকে যাওয়া, দ্বিতীয় কারণ অবশ্যই ফ্রান গঞ্জালেসের চোট এখনও পুরোপুরি ঠিক না হওয়া।
শনিবার বিকেলে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন সংলগ্ন মাঠে হাঁটুতে ব্যান্ডেজ বেঁধেই অনুশীলন করলেন ফ্রান। জর্জের বিরুদ্ধে তিনি শেষ পর্যন্ত খেলতে পারবেন কি না, তা বোঝা যাবে রবিবার সকালে আরও একবার চোট পরীক্ষার পরে। কলকাতা প্রিমিয়ার লিগে তাঁদের নিজেদের ঘরের মাঠ অর্থাৎ ময়দানের ক্লাব মাঠে এখনও পর্যন্ত দু’টো ম্যাচ খেলেছেন সালভা চামোরা-রা। একটিতে হেরেছেন। একটি ম্যাচ ড্র করেছেন। জয় অধরাই। অন্যদিকে ইস্টবেঙ্গলকে নিজেদের ঘরের মাঠে হারিয়েছে জর্জ। সেটাও চিন্তায় রাখছে বাগান কোচকে।
সবুজ-মেরুন কোচ অবশ্য দাবি করলেন, তিনি একেবারেই চিন্তিত নন। রোমারিয়োর ছিটকে যাওয়া থেকে ঘরের মাঠে বিপর্যয়— কোনও কিছু নিয়েই আতঙ্কিত নন। কিবু বলছেন, ‘‘ঘরের মাঠে ম্যাচ হওয়ায় আমি খুশি। ক্লাব ও আমাদের কাছে সমর্থকেরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ওঁদের সামনে খেলার আনন্দই আলাদা।’’ এর পরেই তিনি যোগ করলেন, ‘‘ডুরান্ড কাপে ঘরের মাঠেই আমরা এটিকে-কে হারিয়েছিলাম। আশা করছি আজ ঘরের মাঠে কলকাতা লীগের প্রথম জয়টাও পাবো।’’
তবে কিবু যে একেবারেই স্বস্তিতে নেই, তা তাঁর শরীরী ভাষা থেকেই স্পষ্ট। কী ভাবে অনুশীলন করাবেন তা একটা কাগজ লিখে মাঠে নামেন মোহনবাগান কোচ। খুব প্রয়োজন না হলে পকেট থেকে সেই কাগজ বার করেন না। শনিবার বিকেলেই ব্যতিক্রম। অধিকাংশ সময় হাতেই ধরা থাকল সেই কাগজ। হঠাৎ বৃষ্টি নামায় স্বচ্ছ প্লাস্টিকে শুধু মুড়ে নিলেন তা। এখানেই শেষ নয়। রোমারিয়োর পরিবর্তে ভি পি সুহের-এর প্রথম দলে ফেরা অনেকটাই নিশ্চিত। জানা গেছে, তাঁর সম্ভাব্য সঙ্গী হতে পারেন স্প্যানিশ স্ট্রাইকার সালভা চামোরো। দুই স্ট্রাইকারকে এদিন কোচ বারবার বুঝিয়ে দিলেন কী ভাবে প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারদের বাধা টপকে গোল করতে হবে। চামোরো-সুহের ভুল করলেই চিৎকার করে অনুশীলন থামিয়ে দিলেন। তার পরে নিজেই দেখিয়ে দিলেন কী ভাবে গোল করতে হবে। কিন্তু তাঁর প্র্যাকটিস দেখেই পরিষ্কার, এই ম্যাচেও তাঁর প্রধান ভরসা সেই জোসেবা বেইতিয়া। কারণ, জর্জ কোচ রঞ্জন ভট্টাচার্য খোলাখুলি বলছেন, ‘‘এই মুহূর্তে লিগের যা পরিস্থিতি তাতে রবিবারের ম্যাচ থেকে এক পয়েন্ট অর্জনও কম প্রাপ্তি নয়। আমরা রক্ষণ মজবুত করেই খেলব।’’
অনুশীলন শেষ হওয়ার পরে কিবু বলছিলেন, ‘‘মহমেডান ও ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে একই রণনীতি নিয়ে খেলেছিল জর্জ। অর্থাৎ, ১-৪-১-৪-১। ওদের প্রায় সব বিভাগেই বিদেশি রয়েছে। ভারতীয় ফুটবলারেরাও দারুণ ছন্দে রয়েছে।’’ ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে জর্জের রুদ্ধশ্বাস জয়ও যে তাঁকে বেশ অস্বস্তিতে রাখছে, তাও বোঝা গেল। বললেন, ‘‘ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে ওদের ম্যাচটা খুব কঠিন ছিল। কিন্তু দুর্দান্ত খেলে শেষ মুহূর্তে করা গোলে জর্জ জিতেছিল।’’
পাঁচ ম্যাচে আট পয়েন্ট নিয়ে কলকাতা প্রিমিয়ার লিগ টেবলের পাঁচ নম্বরে এই মুহূর্তে মোহনবাগান। এক ম্যাচ কম খেলে ন’পয়েন্ট নিয়ে চতুর্থ স্থানে জর্জ। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে যথাক্রমে পিয়ারলেস, ভবানীপুর ও ইস্টবেঙ্গল। তিন দলেরই পয়েন্ট দশ। আজ, রবিবার জিতলেই ১১ পয়েন্ট নিয়ে এক নম্বরে উঠে আসার সুযোগ রয়েছে জোসেবা বেইতিয়াদের। কিন্তু পয়েন্ট নষ্ট করলেই ফের পিছু নেবে খেতাব হাতছাড়া হওয়ার আতঙ্ক।