মোদীর ‘আচ্ছে দিনে’ ধুঁকছে বিএসএনএল। বেশ অনেক দিন ধরেই অত্যন্ত বেহাল অবস্থা এই বিখ্যাত কোম্পানীটির। প্রতি মাসে রেভিনিউ ও খরচের মধ্যে বিপুল ফারাক এসে দাঁড়িয়েছে। এই বিষয়ে কেন্দ্রের কাছে পরামর্শ চেয়েছে বিএসএনএল। কোটাক ইনস্টিটিউশনাল ইক্যুইটির হিসেব অনুযায়ী ২০১৮-র ডিসেম্বর পর্যন্ত বিএসএনএল-এর ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৯০,০০০ কোটি টাকা। এ বছরের গোড়া থেকে বেতন বন্ধ। মাঝে এক মাসের বেতন জুটেছিল। কিন্তু তারপর যে কে সেই। বেতন না পেলে দেশ জুড়ে দেশজুড়ে বিক্ষোভের হুমকি দিয়েছিলেন বিএসএনএলের কর্মীরা। কিন্তু সেপ্টেম্বর মাসের ৬ তারিখ পেরিয়ে গেলেও বিএসএনএলে বহাল বেতন অনিশ্চয়তা।
গতকাল এই প্রসঙ্গে সংস্থার সিএমডি পি কে পুরওয়ার ও ডিরেক্টর (ফিনান্স) এস কে গুপ্তের সঙ্গে বৈঠকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কর্মী সংগঠন বিএসএনএল এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট অনিমেষ মিত্র ও সাধারণ সম্পাদক পি অভিমন্যু। অনিমেষবাবুর অভিযোগ, কবে বেতন হবে তা স্পষ্ট করে জানাতেই পারেননি দুই শীর্ষ কর্তা। শুধু বলেছেন, কেন্দ্রের থেকে টাকা আসেনি।
অনিমেষবাবুদের প্রশ্ন, বেসরকারি সংস্থা যখন নতুন করে ল্যান্ডলাইন পরিষেবা আনছে, তখন দীর্ঘ দিন ধরে সেই পরিষেবা চালানোর অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিএসএনএলের পুনরুজ্জীবনে কেন গুরুত্ব দিচ্ছে না কেন্দ্র? তাঁদের সংশয়, এ নিয়ে টালবাহানা করে প্রতিযোগিতার বাজারে ইচ্ছে করেই সংস্থাকে পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে না তো! এই ঘটনা থেকে ফের স্পষ্ট যে কেন্দ্রের উদাসীনতাতেই বিএসএনএলের এহেন মৃতপ্রায় দশা।
এইউএবির আহ্বায়ক পি অভিমন্যুর তোপ, ‘‘কেন্দ্রের কাছে সংস্থার বিপুল বকেয়া। তার উপরে পেনশনের নামে ২০০৭ সাল থেকে বছরে ৪০০ কোটি টাকা বাড়তি আদায় করেছে।’’ কেন্দ্র বিএসএনএলের প্রাপ্য ঠিক সময়ে না মেটালে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন তাঁরা। এই অবস্থা নতুন কিছু না। বলা ভালো মোদী সরকারের উদাসীনতাতেই বিএসএনএলের এহেন হাল।
এর আগে সংস্থায় ফেব্রুয়ারির বেতন হয় মার্চের মাঝামাঝি। কর্মী-অফিসারেরা জুলাইয়ের বেতন পান অগস্টের প্রথম সপ্তাহে। অগস্ট বাদে ঠিকা কর্মীদের বেতনও বকেয়া প্রায় সাত মাস। ক্যালকাটা টেলিফোন্স সূত্রের খবর, তাদের প্রায় ৪,৮০০ কর্মীর বেতন-সহ ঠিকাদারদের পাওনা মেটাতে মাসে প্রায় ১৪ কোটি টাকা দরকার হলেও সম্প্রতি সদর দফতর থেকে মিলেছে ১.৯০ কোটি।
প্রসঙ্গত, গত অর্থ বছরে বিএসএনএল লোকসান করেছে ১৪,০০০ কোটি টাকার মতো। মাসিক আয়ের তুলনায় ৮০০ কোটি টাকা বেশি খরচ হওয়ায় প্রবল নগদ সংকটে পড়তে হয়েছে বিএসএনএলকে। চলতি বছরে দুই মাস সংস্থার কর্মচারীদের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মাসিক বেতন দিতে ব্যর্থ হয়েছে তারা। তার মধ্যে জুলাই মাসের বেতনই রয়েছে, যা দিতে সংস্থা ৫ আগস্ট অর্থ বরাদ্দ করে। এই পরিস্থিতিতে বকেয়া পাওনা উদ্ধার করে নগদ সঙ্কট কিছুটা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছিল তারা। কিন্তু অবস্থা তাতেও কিছু বদলায় নি।
দেশের নানা জায়গায় থাকা তাদের টেলিফোন এক্সচেঞ্জ, দফতরের অব্যবহৃত জায়গা, জমি ইত্যাদি ভাড়া দিয়ে চলতি বছরে ১,০০০ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে বিএসএনএল। গত বছর যা ছিল ২০০ কোটি টাকা। এছাড়া খরচ কমাতে বেশ কিছু কাজ যেগুলি আউটসোর্সড করা রয়েছে, তা নিজেরা করার পরিকল্পনা করছে বিএসএনএল। পাশাপাশি, বছরে তারা বিদ্যুৎ বিল থেকেও ১৫ শতাংশ ব্যয় হ্রাস করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে। নগদ সঙ্কটে জর্জরিত রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিকম সংস্থাটির লক্ষ্য এই পদক্ষেপের মাধ্যমে বছরে ২০০ কোটি টাকা খরচ কমানো।