কেন্দ্রীয় বাজেট পেশের পরই বসে গিয়েছিল গাড়ি ব্যবসার চাকা। গাড়ি বিক্রিতে ধস নামার ফলে বিপাকে যন্ত্রাংশ উৎপাদনকারী সংস্থাগুলিও। গাড়ির বিক্রি তলানিতে পৌঁছনোয় ইতিমধ্যেই কাজ হারিয়েছেন ৩ লক্ষ কর্মী। অবস্থা এমনই যে অধিকাংশ গাড়ি কারখানার বাইরেই দেখা যাচ্ছে, সারি সারি ট্রাক-যাত্রীবাহী গাড়ি দাঁড়িয়ে রয়েছে। কিন্তু কারখানার মূল ফটকের বাইরে চালকদের অফিসের সামনে প্রতিদিনের ভিড়টা উধাও। নেই ব্যস্ততা।
কারণ গাড়িশিল্পে মন্দার জেরে উৎপাদন ইউনিটে কাজ কমেছে। বিক্রি না হয়েছে থাকায় কর্মী ছাঁটাই। এবার কাজ হারানোর আশঙ্কায় দিন কাটছে হরিয়ানার গুরুগ্রামের মারুতি-সুজুকি কারখানার কর্মীদের। কারণ এর মধ্যেই মারুতি-সুজুকির গুরুগ্রাম ও মানেসর কারখানায় দু’দিনের উৎপাদন বন্ধ রাখার ঘোষণা হয়েছে। যার অর্থ, ওই দু’দিনের মাইনে জুটবে না কারখানার কর্মরত শ্রমিকদের। এই তল্লাটের গাড়িশিল্পের সঙ্গে যুক্ত কর্মীরা বলছেন, এমন পরিস্থিতি গত কয়েক দশকে দেখেননি তাঁরা।
পরিবারের একমাত্র রোজগেরে জগনমোহন সিং। বছর পাঁচেক আগে যোগ দিয়েছিলেন মারুতি-সুজুকির গুরুগ্রাম কারখানায়। পরিবার সমেত থাকেন স্থানীয় শীতলা কলোনিতে। গাড়িশিল্পে মন্দার ছায়ায় কার্যত তিনিও আতঙ্কে রয়েছেন। বলেন, ‘যেভাবে গাড়িশিল্পে মন্দা চলছে, তাতে কাজ হারানোর আশঙ্কা তো রয়েছেই। চাকরি চলে গেলে দুই ছেলেমেয়ের পড়াশোনার খরচ আর সংসার চলবে কী করে তা নিয়েই চিন্তায় রয়েছি।’ তাঁর বক্তব্য, গাড়িশিল্পের মন্দা রুখতে সরকারি পদক্ষেপ প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সে সব না করে জিএসটি বসিয়ে গাড়িশিল্পের ভবিষ্যতকে আরও সঙ্কটের মুখে ঠেলে দিয়েছে কেন্দ্র।
প্রসঙ্গত, গুরুগ্রাম, মানেসরের যেসব যন্ত্রাংশ তৈরির কারখানা গাড়ি সংস্থাগুলোর বরাত পায়। সেগুলিতেও কমেছে কাজ। একটা সময় ছিল, নির্দিষ্ট সময়ের পর বাড়তি কাজ করে ১০-১২ হাজার টাকা অতিরিক্ত আয় হত শ্রমিকদের। মন্দার জেরে সে আয়েও কোপ পড়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বেতন বৃদ্ধির দাবি জানানোয় অস্থায়ী শ্রমিকদের বসিয়ে দেওয়ার অভিযোগও শোনা গেল গুরুগ্রামে। কাজ হারিয়ে কেউ পাঞ্জাব, বিহার, উত্তরপ্রদেশ কিংবা বাংলায় ফিরে গেছেন। যাঁরা এখনও টিকে আছেন, তাঁরাও কাজ হারানোর ভয়ে রয়েছেন।
পানিপথের বাসিন্দা বিজেন্দর কুমার গত ১০ বছর ধরে গুরুগ্রামের মারুতি-সুজুকি কারখানায় কাজ করছেন। তিনি বলেন, ‘কখনও এমন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়নি। মানুষ এই দিন দেখার জন্য দ্বিতীয়বার মোদী সরকারকে ক্ষমতায় আনেনি। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে কর্মচ্যুত হতে হবে হাজার হাজার দক্ষ শ্রমিককে।’ আবার গুরুগ্রামের মারুতি উদ্যোগ কামগার ইউনিয়নের সভাপতি কুলদীপ জঙ্ঘুর অভিযোগ, ‘জাতীয়তাবাদের আওয়াজ তুলে ক্ষমতায় আসা মোদী সরকার গাড়ি নির্মাণ শিল্পের উন্নয়নে বিশেষ নজর দেয়নি।’
হরিয়ানায় মারুতির তিনটি কারখানা রয়েছে। মানেসরের ২টি, গুরুগ্রামে ১টি। কুলদীপ বললেন, ‘তিনটি কারখানায় সব মিলিয়ে প্রায় ১২ হাজার অস্থায়ী কর্মী ছিলেন। হাজার তিনেক কর্মী ছাঁটাই হয়েছেন। উৎসবের মরশুমে বিশেষ ছাড় দিয়ে গাড়ি বিক্রি বাড়তে পারে। কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমরা বসেছি। তাঁরা বলেছেন, গাড়ির চাহিদা বাড়লে ফের অস্থায়ী কর্মীদের কাজে নেওয়া হবে।’ তবে কুলদীপরা ম্যানেজমেন্টের দিকে তাকিয়ে থাকলেও শিল্পপতিরা কিন্তু আঙুল তুলছেন মোদী সরকারের দিকেই।
গুরুগ্রামের সুরি অটো প্রাইভেট লিমিটেড গাড়ি-বাইকের কারখানায় যন্ত্রাংশ সরবরাহ করে। সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর অতুল সুরি আগেই জানিয়েছিলেন, ‘গত বছর দীপাবলির পর থেকেই বিক্রি পড়তির দিকে। সরকারই মানুষের মনে বিভ্রান্তি তৈরি করেছে ইলেকট্রিক গাড়ি, বাইক চালুর কথা বলে। লোকের ভয় হয়েছে, পেট্রল-ডিজেলের গাড়ি-বাইক আর চলবে না। অনেকে আবার জিএসটি কমার অপেক্ষা করছেন। দুইয়ে মিলিয়ে শতকরা ৪০ ভাগ বিক্রি কমেছে। তার খেসারত আমাদেরও দিতে হচ্ছে।’