দ্বিতীয় মোদী সরকারের বাজেট পেশের পরই বসে গিয়েছিল গাড়ি ব্যবসার চাকা। বিপাকে পড়ে যন্ত্রাংশ উৎপাদনকারী সংস্থাগুলিও। অবস্থা এতটাই গুরুতর যে, গাড়িনির্মাতা সংস্থাগুলির গুদামে অবিক্রিত গাড়ি জমতে জমতে পাহাড় হয়ে গিয়েছে। গত আগস্ট পর্যন্ত ভারতে এই অবস্থা চলছে টানা ১০ মাস ধরে। যার ফলে, মোট সাড়ে ৩ লক্ষ কর্মী কর্মী ছাঁটাইয়ের পর এখন উৎপাদন বন্ধের পথেও যেতে হচ্ছে তাদের। মারুতি সুজুকির পরে এবার যেমন পালা অশোক লেল্যান্ডের। কারখানায় উৎপাদন বন্ধের পথে দেশের তৃতীয় বৃহত্তম এই গাড়ি নির্মাতা সংস্থাটি। শুক্রবার, ৬ সেপ্টেম্বর থেকে রবিবার বাদ দিয়ে টানা ৫ দিন এন্নোর কারখানায় উৎপাদন বন্ধ রাখার কথা ঘোষণা করল তারা।
এর আগে জুলাই মাসে টানা ৯ দিন পন্থনগর কারখানায় উৎপাদন বন্ধ রেখেছিল অশোক লেল্যান্ড। এছাড়া অগস্টেও প্রায় ১০ দিন গাড়ি উৎপাদন বন্ধ রেখেছিল তারা। যদিও এই বিষয়ে অশোক লেল্যান্ডের মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও এই বিষয়ে তাঁর তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে এক নোটিসে কর্মীদের উদ্দেশ্য করে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চলতি সপ্তাহের ৬ এবং ৭ সেপ্টেম্বর এবং আগামী সপ্তাহের ১০ এবং ১১ সেপ্টেম্বর তাদের এন্নোর কারখানায় উৎপাদন বন্ধ রাখা হচ্ছে। এদিকে, ৯ সেপ্টেম্বরকে ইতোমধ্যেই নন-ওয়ার্কিং ডে হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। যার অর্থ, ৬ থেকে ১১ তারিখ পর্যন্ত টানা কারখানা বন্ধ থাকবে। বাজারে মন্দার জেরে এই পদক্ষেপ করা হয়েছে বলে নোটিসে উল্লেখ করা হয়েছে।
[Total_Soft_Poll id=”8″]
বিগত কয়েক মাস ধরেই ঘরোয়া বাজারে গাড়ির বিক্রি তলনিতে এসে ঠেকেছে। আগের বছরের আগস্ট মাসের তুলনায় এই বছর আগস্টে ঘরোয়া বাজারে অশোক লেল্যান্ডের বাণিজ্যিক গাড়ি বিক্রি কমেছে এক ধাক্কায় ৭০ শতাংশ। গত বছর আগস্টে তাদের ১১,১৩৫ ইউনিট গাড়ি বিক্রি হয়েছিল। এ বছরের ওই মাসে তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩,৩৩৬টি। আবার মন্দার কারণে গত ১০ বছরের মধ্যে প্রথমবার দু’দিনের জন্য উৎপাদন স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশের সর্ববৃহৎ গাড়ি প্রস্তুতকারী সংস্থা মারুতি সুজুকি ইন্ডিয়াও। আগস্টে তাদেরও উৎপাদন কমেছে প্রায় ৩৪ শতাংশ। সূত্রের দাবি, গত বছর আগস্টে মানেসর ও গুরুগ্রামে দিনে গড়ে ৬৭০০টি গাড়ি তৈরি হলেও এ বার হয়েছে প্রায় ৪৫০০টি।
ফলে সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, হরিয়ানার মানেসর ও গুরুগ্রাম কারখানায় আগামী ৭ ও ৯ সেপ্টেম্বর গাড়ির উৎপাদন বন্ধ রাখা হবে। ওই দু’দিন ওই দু’টি কারখানায় কোনও গাড়ি তৈরি হবে না। মারুতি এ-ও জানিয়েছে যে, দেশজুড়ে গাড়ি উৎপাদন শিল্পে তীব্র মন্দার জেরেই তাদের এই সিদ্ধান্ত। এর আগে টাটা মোটরস তাদের জামশেদপুরের বাণিজ্যিক গাড়ির কারখানাটি আগস্টে কিছু দিন বন্ধ রাখে। তাদের চেন্নাই প্ল্যান্টে উৎপাদন বন্ধ রাখার কথা ঘোষণা করেছিল ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম গাড়ি নির্মাতা সংস্থা হুন্ডাই মোটরসও। এছাড়া হোন্ডা, মহীন্দ্রা অ্যান্ড মহীন্দ্রা, টয়োটা কির্লোস্কার মোটরস, হিরো মোটো কর্প, ভিএসের মতো অনেক সংস্থাই কয়েক দিন হয় সম্পূর্ণ, না হয় আংশিক উৎপাদন বন্ধ রেখেছে।