বাজারে চাহিদায় ভাঁটার টান চলছিলই। এবার জানা গেল সঞ্চয়ের হারও কমেছে। দুয়ে মিলে উভয় সঙ্কটে দেশের অর্থনীতি।
কী ভাবে কমেছে সঞ্চয়? অর্থনীতিবিদরা বলছেন, একটা সময় লোকে টাকা জমিয়ে তবে দামি জিনিসপত্র কিনত। তার পর সহজে ঋণ মিলতে শুরু করল। ফলে বাড়ল ধার করে জিনিস কেনার প্রবণতা। টাকা শোধ হত ইএমআই-তে। ইদানীং আয় তেমন বাড়ছে না। ভবিষ্যতে বাড়বে কি না তা-ও অনিশ্চিত। ফলে ধারে কেনার প্রবণতা কমেছে। ও দিকে পুরনো ধার মেটাতে আয়ের অনেকখানি খরচ হয়ে যাচ্ছে বলে সঞ্চয়ও কমছে।
পরিসংখ্যান বলছে, শহরে বেতন বৃদ্ধি বা কর্পোরেট সংস্থার বেতন বৃদ্ধির হার মনমোহন জমানায় একদা ২০ শতাংশ ছাপিয়ে গিয়েছিল। গত অর্থ-বছরে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে। গ্রামের বেতন বৃদ্ধির হার আরও কম। পন্থের বক্তব্য, ‘আয় বাড়ার হার কমে যাওয়াতেই একই সঙ্গে সঞ্চয় ও কেনাকাটা কমেছে’। ফিচ্ গোষ্ঠীর ইন্ডিয়া রেটিংস-এর মুখ্য অর্থনীতিবিদ দেবেন্দ্র পন্থ বলেন, ‘লোকে যদি মনে করে, এত দিন আয় যেমন ভাবে বাড়ছিল, তার থেকে বেশি না হলেও ভবিষ্যতে অন্তত সেই ভাবে বাড়বে, তা হলেও ধার করে কেনাকাটা চালিয়ে যায়। কিন্তু আয় বাড়ার হার কমে গেলে ধার করে কেনাকাটা বন্ধ করে দেয়’।
অর্থনীতির গাড়ি ছোটে চারটি ইঞ্জিনে। নতুন লগ্নী, রফতানি, সরকারি খরচ এবং বাজারে কেনাকাটা। নতুন লগ্নী ও রফতানি – দু’দিকেই ভাঁটার টান। সরকারি খরচ বিশেষ বাড়ছে না। বাজারে কেনাকাটাই ছিল ভরসা। এ বার তা-ও কমে গিয়েছে। পন্থের যুক্তি, ‘এটা ব্যবসার ওঠাপড়ার ফলে তৈরি হওয়া ঝিমুনি নয়। এটা অর্থনীতির ভিতের দুর্বলতা। আয়বৃদ্ধির হার কমা, কম সঞ্চয়ের ফাঁদ থেকে অর্থনীতিকে বের করা না গেলে, চড়া হারে আর্থিক বৃদ্ধির পথে হাঁটা সম্ভব নয়’।