কলকাতার নাগরিকদের সুবিধা-অসুবিধার দিকে সবসময়েই নজর রাখেন মহানাগরিক ফিরহাদ হাকিম। কলকাতার বাসিন্দাদের যাতে পুর-পরিষেবা কোথাও কোনও রকম অসুবিধা না হয় তাই ফিরহাদ চালু করেছেন ‘টক টু মেয়র’। যেখানে মেয়র নিজে বাসিন্দাদের সঙ্গে ফোনে কথা বলে তাঁদের সমস্যা সমাধান করেন। এবার মেয়রের একটা ফোনেই ইএম বাইপাস সংলগ্ন একটি বেসরকারি হাসপাতালে এক গরিব শিশুর চিকিৎসার ব্যবস্থা হয়ে গেল।
গতকাল অন্যান্য ফোনের মতোই একটি ফোন আসে সাঁইথিয়ার হরিশা পঞ্চায়েত থেকে। এক মহিলা রীতিমতো কান্না ভেজা গলায় তাঁকে বলেন, স্যার আমাদের বাঁচান। খুব বিপদ। মেয়র তাঁর কাছে বিস্তারিত শুনতে চান। ওই মহিলা তাঁকে বলেন, আমার বউদিকে সাঁইথিয়া হাসপাতালে প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে ভর্তি করা হয়। সেখানে আমার দাদার ছেলে হওয়ার পর আমাদের বলা হয়, শিশুটির অবস্থা ভালো নয়। তাই ভেন্টিলেশনে রাখতে হবে। সেখান থেকে আমরা সিউড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাই। কিন্তু সেখানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না পাওয়ায় আমাদের বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলা হয়। কিন্তু সেখানে না নিয়ে আমরা দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাই। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওই সদ্যোজাতের শ্বাসনালীতে অস্ত্রোপচার সহ একাধিক চিকিৎসার জন্য প্রায় তিন লক্ষ টাকা খরচের কথা বলে। অত টাকা না জোগাড় হওয়ায় আমরা নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে চলে আসি। কিন্তু সেখানেও বলা হল, এই চিকিৎসা করা সম্ভব নয়। কারণ, শিশুটির অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। সঙ্গে সঙ্গে আমরা ফের অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে ইএম বাইপাস সংলগ্ন হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। সেখানেও চিকিৎসার জন্য লক্ষাধিক টাকা লাগবে। অত টাকা আমাদের পক্ষে জোগাড় করা সম্ভব নয়। সব শুনে মেয়র তাঁকে আশ্বস্ত করেন এবং হাসপাতালের এক কর্তার সঙ্গে দেখা করতে বলেন। মেয়র ওই মহিলার ফোন রেখে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালের কর্তাকে ফোন করে বলেন, ওই শিশুটির চিকিৎসার খরচ আমি দেব। শিশুটির পরিবারের থেকে যেন কোনও টাকা না নেওয়া হয়। মেয়রের এই বক্তব্যে পাশে থাকা পুরকর্তা-আধিকারিকরা বাহবা দেন।
বুধবার বাইপাস সংলগ্ন ওই হাসপাতাল থেকে বলা হয়, শিশুর শারীরিক পরীক্ষা করে জানা গিয়েছে, ওর দু’টি ফুসফুসই খারাপ। ইতিমধ্যেই বিলের অঙ্ক আড়াই লক্ষ টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে। আরও লক্ষাধিক টাকা লাগবে। মৌসুমীদেবী বলেন, যা দেখে আমার দাদা সুমন্ত ঘটক এবং পরিবারের সবার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার জোগাড়। আমি সংবাদমাধ্যমে মেয়রকে বলতে দেখে ফোন করে আমাদের দুর্দশার কথা জানাই। সঙ্গে সঙ্গে স্যার আমাদের কথায় পদক্ষেপ করেছেন। আমরা তাঁর কাছে সারা জীবন কৃতজ্ঞ থাকব।