বহুদিন যাবৎ উৎকণ্ঠা দানা বাঁধছিল আসাম জুড়ে। অবশেষে দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে গত শনিবার প্রকাশিত হয়েছে আসামের জাতীয় নাগরিকপঞ্জী বা এনআরসি-র চূড়ান্ত তালিকা। যা থেকে বাদ গিয়েছে ১৯ লক্ষ ৬ হাজার ৬৫৭ জনের নাম। কিন্তু এঁদের মধ্যে অধিকাংশই হিন্দু। জন্মও এ দেশেই। ফলে এই মুহূর্তে ‘হিন্দু বিরোধী বিজেপি হুঁশিয়ার’ স্লোগানে কাঁপছে আসাম।
প্রসঙ্গত, গত ৩১ আগস্ট জাতীয় নাগরিকপঞ্জীর চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর থেকেই রাস্তায় নেমেছে কট্টরহিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো। ‘হিন্দু বিরোধী বিজেপি ফিরে যাও’ স্লোগান দিয়ে আসামে বন্ধের ডাক দিয়েছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও বজরং দল। এই কট্টরহিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোর দাবি, বাদ পড়া ১৯ লক্ষের মধ্যে রয়েছেন মাত্র ছয় লক্ষ মুসলমান। আর হিন্দু ১১ লক্ষেরও বেশি। তবে এ ব্যাপারে আসামের বিভিন্ন নেতারা মুখ খুললেও অদ্ভুতভাবে নীরব নির্বাচনের সময় হিন্দুদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে ভোটে জেতা বিজেপির বিধায়ক ও সাংসদরা।
এই কারণে হিন্দুদের সুরক্ষার দাবিতে তাঁদের পদত্যাগের দাবি নিয়ে পথে নেমেছে আসাম হিন্দু বাঙালি অ্যাসোসিয়েশন-সহ বিভিন্ন হিন্দু সংগঠনগুলো। আসাম বাঙালি হিন্দু অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বাসুদেব শর্মা বলেন, ‘১৯ লক্ষের মধ্যে মাত্র ছয় লক্ষ মুসলমান এবং এর দ্বিগুণ হিন্দু রয়েছেন। ২০১৪ ও ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচন এবং ২০১৬ অসম বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির একমাত্র প্রতিশ্রুতি ছিল হিন্দুদের সুরক্ষা দেওয়া। আমরা বারবার তাঁদের কথায় কান দিয়েছি এবং আজ মনে হচ্ছে আমরা এক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছি। রাজ্যে খাল কেটে কুমির ডেকে এনেছি আমরা।’
বজরং দলের এক কর্মী জানিয়েছেন, ‘বিজেপির বিরুদ্ধে আমাদের দল রাস্তায় নেমেছে। রাজ্যপালের কাছে আমাদের কিছু দাবি আছে। গত ৩১ আগস্ট আসামে জাতীয় নাগরিকপঞ্জীর যে তালিকা প্রকাশিত হয়েছে, তাতে আমরা একেবারেই সন্তুষ্ট নই। খোদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও মেনে নিয়েছেন যে আসামে এখন ৫০ লাখেরও বেশি অবৈধ মুসলিম অনু্প্রবেশকারী রয়েছে। কিন্তু নাগরিকপঞ্জীর যে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হয়েছে, তাতে অবৈধ মুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের চেয়ে দ্বিগুণ সংখ্যক হিন্দু এনআরসির তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন। এটা আমরা কিছুতেই মেনে নেব না।’