গঙ্গার তলা দিয়ে যাবে মেট্রো। দেশের ‘যমজ’ শহর কলকাতা-হাওড়ার যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নত করার লক্ষ্যে এমনই পদক্ষেপ নিয়েছিল কলকাতা মেট্রো রেল কর্পোরেশন বা কেএমআরসিএল কর্তৃপক্ষ। ভারতে এমন প্রকল্প এই প্রথম। তাই দেশজুড়ে, এমনকি বিদেশ থেকেও মিলেছিল প্রশংসা। তাতে মেট্রোর আত্মবিশ্বাসও বেড়েছিল। কিন্তু কাল হল সেই আত্মবিশ্বাসই। গোটা বউবাজার অঞ্চলের কাছেই মেট্রো এখন যেন সাক্ষাৎ মৃত্যুদূত। তবে এই প্রথম নয়। এবার যেমন মেট্রো কেড়ে নিল বহু মানুষের আশ্রয়, ব্যবসা এবং সঞ্চয়। তেমনি পঞ্চাশ বছর আগেও একবার সে কেড়ে নিয়েছিল জমি-বাড়ি। দুই সময়েরই সাক্ষী ১৩এ দুর্গা পিতুরি লেনের বাসিন্দা জয়ন্ত শীল, যিনি আপাতত সপরিবার চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ সংলগ্ন চাঁদনি চকের হোটেলে থাকছেন।
জয়ন্ত শীল জানান, ‘এই প্রথম নয়। কলকাতায় টালিগঞ্জ থেকে দমদম পর্যন্ত মেট্রো রেল তৈরির সময়েই ১৯৬৯ সালে হারাতে হয়েছিল জমি-বাড়ি।’ প্রসঙ্গত, সে সময় চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ এবং বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটের সংযোগস্থলে সেন্ট্রাল মেট্রো স্টেশনের জন্য অনেক পরিবারকেই জায়গা ছেড়ে দিতে হয়েছিল। তাদের মধ্যে ছিল শীল পরিবারেরও জমি-বাড়ি। জয়ন্তবাবুর বাবা বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত নিতাইচাঁদ শীলের জমিও ছিল সেই তালিকায়। সরকারি প্রকল্পের জন্য সে সব ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন তাঁরা। জয়ন্তবাবুর দাবি, সে বার বাড়ি-জমি বাবদ ক্ষতিপূরণের টাকা পেতে তাঁদের বিস্তর কাঠখড় পোড়াতে হয়। মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তিরিশ বছর লড়াই চালানোর পর ১৯৯৯ সালে তাঁর বোনের বিয়ের সময় সেই ক্ষতিপূরণের টাকা মেলে। প্রায় ১৩ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ পেয়েছিলেন তাঁর বাবা।
১৯৬৯ সালের পর এবার ২০১৯ সাল। গত শনিবার, ৩১ আগস্ট সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ আচমকা কম্পন অনুভব করেন বাসিন্দারা। এর পরেই ১৩এ দুর্গা পিতুরি লেনের বাসিন্দা জয়ন্ত শীলের দু’শো বছরের পুরনো বাড়ির দেওয়াল ফাটল দেখা যায়। সেইসঙ্গে মেঝেতেও গভীর ফাটল ধরে। রাতের মধ্যেই সেই ফাটল আরও বাড়তে থাকে। ভেঙে পড়তে থাকে ছাদের চাঙড়। তারপরেও বাড়ির খাঁচাটুকু দাঁড়িয়ে ছিল। অবশেষে মঙ্গলবার সকালে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে খাঁচাটুকু। সেই সঙ্গে শেষ হয়ে যায় কাগজ এবং গুরুত্বপূর্ণ নথি পাওয়ার আশা। বাড়ির একতলায় গত ২৩ বছর ধরে ছাপাখানার ব্যবসা ছিল জয়ন্তবাবুর। তিনি বলেন, ‘মেট্রো আমাদের পরিবারের পিছু ছাড়ছে না। এক বার বাড়ি-জমি নিল। এবার সব কেড়ে নিল! পার্থক্য একটাই। সেবার আগে থেকে বলে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ জমি নিয়েছিলেন। এবার সেই সময়টুকুও পাইনি।’