চলছে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ। ক্রিকেটের পরিভাষায় এ এক নতুন সংযোজন। বিশ্বের টেস্ট খেলিয়ে দেশগুলোর মধ্যে লড়াই। সেই লড়াইয়ে এক নম্বর দলের মতোই সঙ্গে অভিযান শুরু করল ভারত। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২-০ ব্যবধানে হারানোর সুবাদে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে পয়েন্ট তালিকায় শীর্ষস্থানে উঠে এল কোহলি বাহিনী। ভারতের মোট পয়েন্ট ১২০।
প্রথম ম্যাচে টিম ইন্ডিয়া জিতেছিল ৩১৮ রানে। দ্বিতীয় টেস্টেও কোহলি-ব্রিগেডের দাপট অব্যাহত রইল। জামাইকা টেস্টে ভারত ২৫৭ রানে হারাল ক্যারিবিয়ানদের। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট তালিকায় ভারতের পরে রয়েছে নিউজিল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কা। দুই দলই ৬০ পয়েন্ট করে পেয়েছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ভারত আগেই টি-২০ ও ওয়ান ডে সিরিজে ক্লিন সুইপ করেছিল। টেস্ট সিরিজেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।
তবে সাফল্যের মাঝেও ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টকে কিছুটা চিন্তায় রেখেছে ওপেনিং জুটির সমস্যা। তবে প্রাপ্তির ভাঁড়ার পরিপূর্ণ। বুমরাহ, ইশান্ত শর্মা, মহম্মদ সামি দুরন্ত বোলিং করেছেন। রবীন্দ্র জাদেজার অলরাউন্ড পারফরম্যান্স টেস্ট সিরিজে দু’দলের মধ্যে বড় ফারাক গড়ে দিয়েছে। সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে অজিঙ্কা রাহানের দারুণ প্রত্যাবর্তন কিংবা হনুমা বিহারির আস্থা জাগানো ব্যাটিং। সার্বিকভাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ‘টিম গেম’ ফুটিয়ে তুলতে সফল ‘মেন ইন ব্লু’। পাশাপাশি ক্যাপ্টেন হিসাবেও অনন্য নজির গড়ে ফেলেছেন কোহলি। মহেন্দ্র সিং ধোনিকে টপকে আপাতত তিনিই সর্বাধিক টেস্ট জয়ী ভারতীয় অধিনায়ক। ৬০টি টেস্টে নেতৃত্ব দিয়ে মাহি জিতেছিলেন ২৭টি ম্যাচ। কোহলি মাত্র ৪৮ টেস্টেই ধোনিকে টপকে গেলেন।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজে নজরকাড়া সাফল্যের পিছনে দলগত সংহতি ও সতীর্থদের প্রচেষ্টাকেই তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন কোহলি। তাই হয়তো সৌরভ গাঙ্গুলি, মহেন্দ্র সিং ধোনিকে টপকে টেস্টে ভারতের সফলতম অধিনায়ক হওয়ার দিনেও বিরাট সহ-খেলোয়াড়দের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। তিনি বলেছেন,‘‘অধিনায়কত্ব মানে তো শুধু নামের আগে ‘সি’ যুক্ত হওয়া। আসল কৃতিত্ব গোটা দলের। এই সাফল্যের পিছনে স্কোয়াডের প্রত্যেক সদস্যের অবদান রয়েছে। দলে যদি এত ভালো মানের বোলার না থাকত, তাহলে এই ফল মোটেও সম্ভব হত না।’ অধিনায়ক হিসাবে দেশের মাটিতে ১৫টি ও বিদেশে ১৩টি টেস্ট জয়ের স্বাদ পেয়েছেন বিরাট।
২০১৬ সালের অক্টোবর থেকে আইসিসি’র টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষে রয়েছে ‘টিম ইন্ডিয়া’। এই সাফল্যের পিছনে ব্যাটসম্যানদের পাশাপাশি বোলারদেরও বড় ভূমিকা রয়েছে। সেটা আরও একবার মনে করিয়ে দিয়ে কোহলি বলেছেন, ‘যত খুশি রান করা যায়। কিন্তু ভালো বোলিং না করলে ম্যাচ জেতা যায় না। মহম্মদ সামি দ্বিতীয় টেস্টে অনবদ্য বোলিং করল। যশপ্রীত বুমরাহর ক্ষেত্রে কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়। ও যখন আন্তর্জাতিক কেরিয়ার শুরু করেছিল, তখন আমরা টি-২০ বোলার হিসাবেই চিনতাম। কিন্তু বিগত কয়েক বছরে ও সব ফরম্যাটেই উন্নতি করেছে। এটা সহজে বলা যায়, কিন্তু বাস্তবে করে দেখানো সত্যিই কঠিন। টেস্ট এবং সীমিত ওভারের ক্রিকেটে বুমরার উত্থান উল্কার গতিতে। ইশান্ত শর্মা হৃদয় দিয়ে বল করছে। সত্যি বলতে ওর মতো একজন সিনিয়র বোলারকে দেখে অনেক কিছু শেখার রয়েছে বাকিদের। আমাদের বোলিং ইউনিট দুর্দান্ত। কারও কোনও সমস্যা হলে অন্যেরা ঝাঁপিয়ে পড়ে তার দিকে সহযোগিতার হাত বাড়ায়। রবীন্দ্র জাদেজাকে খেলানো নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছিল। কিন্তু বিশ্বাস ছিল, ও পারবে। তা জাদেজা প্রমাণ করে দিয়েছে। এই মুহূর্তে জাড্ডু বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। অসামান্য আত্মবিশ্বাস ওর বড় শক্তি। ব্যাট হোক বা বল, হাতে নিলেই সেরা পারফরম্যান্স উজাড় করে দেওয়ার জন্য ও সবসময়ে প্রস্তুত।’ সবমিলিয়ে ভারতীয় টিম এখন টগবগ করে ফুটছে আত্মবিশ্বাসে। সব বিভাগেই সাফল্য এসেছে এই টিমের। আর সেটা দলগত খেলার সুফল বলেই মনে করছেন কিং কোহলি।