লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের ৪০ শতাংশ মানুষ বিজেপিকে ভোট দিয়েছে ঠিকই। কিন্তু তারা যে ফের ভোট দেবে তার নিশ্চয়তা কই? কী করে ধরে রাখবেন ভোট? এই হাওয়ায় ভর করে বিধানসভায় সাফল্য নিশ্চিত করতে পারবেন? এবার আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবতের এ হেন প্রশ্নেই কুপোকাত রাজ্য বিজেপির নেতারা। তৃণমূল বিরোধিতার বাইরে কী তাঁদের বিকল্প পরিকল্পনা? অবিলম্বে তা তৈরি করতে নির্দেশ দিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ-সুব্রত চট্টোপাধ্যায়কে।
প্রসঙ্গত, শনিবার ৩ দিনের কলকাতা সফরে আসেন আরএসএস প্রধান ভাগবত। তিন দিনের অধিকাংশ সময়েই দলের রাজ্য সদর দফতর কেশব ভবনে ঘাঁটি গেড়েছিলেন তিনি। ভিএইচপি ও আরএসএস-এর নেতাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন আরএসএস প্রধান। বৈঠক করেন বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গেও। সেখানেই ভাগবতের প্রশ্নের মুখে অস্বস্তিতে পড়েন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ ও সাংগঠনিক সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চট্টোপাধ্যায়রা।
ওদিন ভগবতের সঙ্গে ওই বৈঠকে দিলীপ-সুব্রত ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন আরএসএস নেতা ভাইয়াজি জোশী ও রন্তিদেব সেনগুপ্তরা। সেই বৈঠকেই রাজ্যে তৃণমূলের নীতির বিকল্প কী নীতি তৈরি হয়েছে তা জানতে চান ভাগবত। তিনি প্রশ্ন করেন, লোকসভা নির্বাচনের পর থেকে গোটা বাংলায় লাফিয়ে বাড়ছে বিজেপি। কিন্তু প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার হাওয়ার ওপর ভরসা করে কি আগামী নির্বাচনগুলিতেও সাফল্য নিশ্চিত করতে পারবেন আপনারা? তাঁর প্রশ্নের যদিও কোনও জবাব ছিল না দিলীপ ঘোষদের কাছে।
এর পরই রাজ্যে তৃণমূল বিরোধিতার সরলরৈখিক নীতির বাইরে অবিলম্বে বিকল্প নীতির তৈরির নির্দেশ দেন সঙ্ঘ প্রধান। বলেন, লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের ৪০ শতাংশ মানুষ বিজেপিকে ভোট দিয়েছে। কিন্তু তারা যে ফের ভোট দেবে তার নিশ্চয়তা কই? কী করে ধরে রাখবেন ভোট? কিছু ভেবেছেন! বিকল্প নীতি না তৈরি করলে তৃণমূলকে সরালে যে আরও অরাজকতা তৈরি হবে না সে ব্যাপারে ভোটাররা নিশ্চিত হবেন কী করে?
উল্লেখ্য, এ রাজ্যে তৃণমূল বিরোধিতা ও হিন্দুত্বের লাইনে চলে গত কয়েক বছরে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে বিজেপি। তবে রাজনৈতিক ভাবে প্রশাসন চালানোয় তাদের নীতি কী তা এখনো অজানা রাজ্যবাসীর। ফলে শুধুমাত্র প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার হাওয়াই বিজেপির সাফল্যের একমাত্র ভরসা। সেই খাদ পূরণে ইতিমধ্যে ‘দিদিকে বলো’-র মতো কর্মসূচীও শুরু করে দিয়েছে তৃণমূল। বিকল্প নীতি তৈরিই সাফল্যের ধারা বজায় রাখার অব্যর্থ দাওয়াই, সে কথাই রাজ্য বিজেপি নেতাদের জানান ভাগবত।
তিনি বলেন, লোকসভা ভোটে তৃণমূল ধাক্কা খেয়ে দিদিকে বলো কর্মসূচী নিয়েছে, ড্যামেজ কন্ট্রোলে বিকল্প একটা নীতি গ্রহণ করেছে। কিন্তু রাজ্য বিজেপি কী করেছে, কিছুই করেনি। তাই কী করতে হবে আর কী করতে হবে না জানিয়ে তিনি সাফল্য ধরে রাখার দাওয়াই দিয়ে গিয়েছেন রাজ্য বিজেপিকে। অন্যদিকে, তিনদিনের কলকাতা সফরের শেষদিনে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে দেখা করে যে এমন কঠিন একটা অঙ্ক কষতে দেবেন সঙ্ঘ প্রধান, সে কথা ঘূণাক্ষরেও কল্পনা করতে পারেননি দিলীপ ঘোষরা।