৪ সেপ্টেম্বর। আজ থেকে ঠিক ৫৭ বছর আগে ভারতীয় ফুটবলে লেখা হয়েছিল এক নতুন রুপকথা। এশিয়ান গেমসে সোনা জিতে দেশে ফিরেছিল রহিম সাহেবের ছেলেরা। নেপথ্যে ছিলেন দলের ‘সেনাপতি’ অর্থাৎ কোচ সৈয়দ আব্দুল রহিম। বলা ভাল, তাঁর কোচিংয়ে ভর করে স্বপ্ন দেখেছিল তামাম ভারতবাসী। হরফ করে বলা যায়, এই টুর্নামেন্টের পরেই ভারতকে সমীহ করতে শুরু করে ফুটবলবিশ্বে এগিয়ে থাকা দেশগুলি। স্বাধীনতার ১৫ বছর পর এরকম আন্তর্জাতিক ট্রফি জয়ে নতুন করে পুনর্জন্ম হয় ভারতীয় ফুটবলের।
সেইবছর এশিয়ান গেমসের আসর বসেছিল ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায়। ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়, দক্ষিণ ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, জাপান, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন্স- মোট ৮ টি দেশ অংশগ্রহন করেছিল এই টুর্নামেন্টে। টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় দিনে ভারতের মুখোমুখি হয় দক্ষিণ কোরিয়ার। নিজেদের প্রথম ম্যাচেই ভারত জেতে ২-০ গোলে। দ্বিতীয় ম্যাচে থাইল্যান্ডকে ৪-১ গোলে উড়িয়ে দেয় রহিম সাহেবের ছেলেরা। ২ গোল করেন পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়। ১ টি করে গোল করেন চুনী গোস্বামী ও তুলসীদাস বলরাম। পরেরদিন জাপানের বিরুদ্ধে পিকে বন্দ্যোপাধ্যায় ও তুলসীদাস বলরামের করা গোলে ফের ২-০ গোলে ম্যাচ জিতে সেমিফাইনালে যায় ভারতীয় দল।
সেমিতে তাঁরা মুখোমুখি হয় দক্ষিণ ভিয়েতনামের। ৩-২ গোলের ব্যবধানে ম্যাচ জিতে ফাইনালে যায় অরুময় নিগম-চুনী গোস্বামীরা। ২ টি গোল করেন চুনী গোস্বামীর ও ১ টি গোল করেন জার্নেল সিং। অবশেষে আসে সেই বহু প্রতীক্ষিত ফাইনাল ম্যাচ। ৪ সেপ্টেম্বর জাকার্তার সেনায়ান মেন স্টেডিয়ামে দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে ফাইনালে নামে পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়-অরুণ ঘোষ-রাম বাহাদুর ছেত্রীরা। খেলা শুরুর ২০ মিনিটের মধ্যেই সেই ম্যাচে ২ গোলে এগিয়ে যায় ভারত। ১৭ মিনিটে একটি গোল করেন পিকে বন্দ্যোপাধ্যায় ও ২০ মিনিটে দলের হয়ে দ্বিতীয় গোলটি করেন জার্নেল সিং। এরপর আর গোল না হলেও গোটা ম্যাচেই নিজেদের আধিপত্য কায়েম করে রাখে আব্দুল সাহেবের ছেলেরা। খেলা শেষ হওয়ার মিনিট পাঁচেক আগে দক্ষিণ কোরিয়া ১ টি গোল শোধ করে। যদিও তাতে বিন্দুমাত্র ক্ষতি হয়নি। শেষপর্যন্ত ২-১ গোলেই ম্যাচ জিতে নেয় ভারত এবং সোনা জয় করে ভারতের ‘সোনার’ ছেলেরা।
আজ সেই স্মরণীয় দিনের ৫৭ বছর। আজ সেই দিন, যা চিরকাল গর্বের সাথে মাথা উঁচু করে বাঁচতে শেখাবে ভারতীয় ফুটবলকে। তবে এই দিন নিয়ে বর্তমানে কোনো মাতামাতি নেই। সেভাবে এই এশিয়ান নিয়ে জানেওনা বর্তমান প্রজন্ম। তাই ভারতীয় ফুটবলের এমন গর্বের মুহূর্তকে স্মরণীয় করে রাখার উদ্যোগ নিয়েছেন বলিউড স্টার অজয় দেবগণ। সৈয়দ আব্দুল রহিমকে নিয়ে তিনি সিনেমা বানাচ্ছেন, যেখানে তুলে ধরা হবে ৬২’-এর এশিয়ান জয়কে। আর এর মাধ্যমেই তিনি শ্রদ্ধা জানাবেন তৎকালীন ভারতীয় দল ও তাঁদের ‘সেনাপতি’ সৈয়দ আব্দুল রহিম সাহেবকে।