শেষ চেষ্টা। মরিয়া চেষ্টা। সোমবার গভীর রাত পর্যন্ত সেটাই করলেন মুকুল রায়। বিজেপিতে শোভন-বৈশাখীর মধুচন্দ্রিমাতেই বিচ্ছেদের সুর বেজে ওঠায় দিল্লীতে নিজের বাসভবনে বৈঠকে বসেন মুকুল রায়। সঙ্গে শোভন চট্টোপাধ্যায় ও বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়।জানা গেছে, অভিমান, ক্লেশ, কষ্ট, ক্ষোভ – সব কিছু উগড়ে দিয়েছেন তাঁরা। মানভঞ্জনের চেষ্টা করেছেন মুকুলও।
টানা ৩ ঘণ্টা চলে বৈঠক। তারপর শোভন বললেন, ‘মুকুলদার সঙ্গে আমার দাদা–ভাইয়ের সম্পর্ক। দিল্লিতে এলেই মুকুলদার সঙ্গে দেখা করি। তৃণমূলকে ভালো জায়গায় নিয়ে গিয়েছিলেন মুকুল রায়’। মুকুল বললেন, ‘শোভন–বৈশাখী বিজেপিতে ছিলেন–আছেন। আগামী দিনে কী হবে সেটা ভবিষ্যৎ বলবে’। এত কিছুর পরেও বৈশাখীর গলায় কিছুটা অভিমানের সুর। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের কোথাও কোথাও ব্যথা ছিল, যন্ত্রণা ছিল। তার কথা মুকুলদাকে জানিয়েছি। তিনিও দাদার মতোই পরামর্শ দিয়েছেন’।
তবে শোভন-বৈশাখীর মনে যে একটা অভিমান তৈরি হয়েছিল, তা স্বীকার করে নেন মুকুল রায়ও। তিনি বলেন, ‘আমি দিল্লীতে ছিলাম। ওঁরাও দিল্লীতে ছিলেন। আমাকে আমার দলের মহাসচিব একবার বললেন, ওঁদের সঙ্গে কথা বলতে। কথা বলা মানে আমরা আড্ডায় বসি। সাড়ে তিন ঘণ্টা আড্ডার ফাঁকেই চলে কথা। ওঁদের সব কথাই শুনেছি। তবে যে জল্পনা উঠছে যে শোভন-বৈশাখী বিজেপি ছাড়ছেন, তা মিথ্যা’।
যোগদানের দু সপ্তাহের মধ্যেই বিজেপিতে মোহভঙ্গ হয়েছে শোভন ও বৈশাখীর। তার অন্যতম কারণ, দেবশ্রী রায়। দুজনের শত আপত্তি সত্ত্বেও রায়দিঘির তৃণমূল বিধায়কের বিজেপিতে যোগদান প্রায় পাকা। এমতবস্থায় দলে অসম্মানিত বোধ করছেন দুজনে। দেবশ্রীকে নিয়ে নিজেদের আপত্তির কথা আগেও জানিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু সূত্রের খবর, হাই কমান্ড দেবশ্রীর যোগদানে সবুজ সংকেত দেওয়ায় দল ছাড়ার মনস্থির করে ফেলেছেন তাঁরা। ব্যস! তাতেই অস্বস্তিতে পড়ে বিচ্ছেদ আটকাতে মাঠে নামেন কেন্দ্রীয় নেতা তথা দলের পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়, তাঁর ডেপুটি অরবিন্দ মেনন। কিন্তু প্রত্যেকের কাছেই একই অনুরোধ রেখেছেন শোভন ও বৈশাখী, বিজেপি থেকে নিষ্কৃতি চান তাঁরা।
এর মধ্যেই রাজধানীতে এসে বিজেপি নেতা জে পি নাড্ডার সঙ্গে দেখা করেন শোভন-বৈশাখী। এদিকে, সোমবারই দুজনের সঙ্গে নয়াদিল্লীর বাসভবনে বৈঠক করবেন বলে মুকুল রায় তড়িঘড়ি সল্টলেকে রাজনৈতিক শিষ্য বিধাননগরের সদ্য প্রাক্তন মেয়র সব্যসাচী দত্তের গণেশ পুজোর উদ্বোধন সেরে রাজধানীর উদ্দেশ্যে রওনা দেন। সূত্রের খবর, এই বৈঠকে দুজনের অভাব অভিযোগ মন দিয়ে শোনেন মুকুল এবং দল না ছাড়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু মুকুলের আবেদনে শোভন ও বৈশাখী আদৌ সাড়া দিয়ে মন পালটান কিনা সেটাই দেখার।