প্রথম ইনিংসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যখন নোটবন্দীর মতো অ্যাডভেঞ্চারিজমের পথে হেঁটেছিলেন, তখনই ভবিষ্যদ্বাণী করে তিনি বলে দিয়েছিলেন, ‘এ হল সংগঠিত লুঠ। এর ফলে অর্থনীতি আগামী কয়েক বছর ধরে ভুগবে।’ প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের করা সেই ভবিষ্যদ্বাণীই এখন সত্যি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই মুহূর্তে সারা দেশেই অর্থনৈতিক মন্দার বাজার। গাড়ি বাজারে নেমেছে বিরাট ধ্বস। জিডিপির নিরিখে বিশ্ববাজারেও পিছিয়ে পড়েছে ভারত। প্রায় দিন শেয়ারের বাজারের সূচক নিম্নগামী। দেশে অর্থনীতির এ হেন বেহাল দশা নিয়ে এ বার ফের মোদী সরকারকে কাঠগড়ায় তুললেন মনমোহন। বৃদ্ধির হার পাঁচ শতাংশে নেমে যাওয়ার পরে দেশ দীর্ঘ আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করলেন তিনি। আর এই ‘মানব-নির্মিত’ সঙ্কটের জন্য মোদী সরকারকেই দায়ী করলেন মনমোহন।
শুক্রবার আর্থিক বৃদ্ধির হার ছ’বছরের সর্বনিম্ন অবস্থায় পৌঁছনোর পরে মনমোহনের দ্বারস্থ হন কংগ্রেস নেতারা। এক দিন সময় নিয়ে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে ব্যতিক্রমী ভাবে এক ভিডিয়ো বার্তায় নিজের মত তুলে ধরলেন এই প্রবীণ অর্থনীতিবিদ। যার পরতে পরতে মোদী সরকার, বকলমে প্রধানমন্ত্রী মোদীকেই বিঁধলেন তিনি। ওই ভিডিওয় মনমোহন বলেন, ‘বৃদ্ধির হার ইঙ্গিত দিচ্ছে, দীর্ঘ অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছি। অথচ ভারতের আরও দ্রুত গতিতে উন্নতির সব ক্ষমতা আছে। কিন্তু মোদী সরকারের সব রকম অব্যবস্থাই আজ এই সঙ্কট ডেকে এনেছে। উৎপাদন ক্ষেত্রের বৃদ্ধি মাত্র ০.৬ শতাংশের। স্পষ্ট, নোটবন্দীর ভুল সিদ্ধান্ত ও তাড়াহুড়োয় রূপায়ণ করা জিএসটির লোকসান থেকে অর্থনীতি বেরোতে পারেনি।’
তাঁর সাফ কথা, ‘যে মূল্যবৃদ্ধির হার কমা নিয়ে বড়াই করে মোদী সরকার, সেটি কৃষকের আয় কম করে হাসিল করা হয়েছে। গ্রাম সঙ্কটে, আয় কমছে, কৃষক ফসলের দাম পাচ্ছেন না। সরকারকে অনুরোধ, বদলার রাজনীতি ছেড়ে সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষের পরামর্শ নেওয়া হোক। অর্থনীতিকে এই মানব-নির্মিত সঙ্কট থেকে বের করা হোক।’ মনমোহনের নিশানা যে সরাসরি মোদীকে, তা বুঝতে অসুবিধা হয়নি বিজেপির। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনকে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তাঁর জবাব, ‘মনমোহন সিং কী বলেছেন, বদলার রাজনীতি ছেড়ে প্রকৃতিস্থ স্বরের পরামর্শ নিতে? ঠিক আছে, ধন্যবাদ। তাঁর কথাও শুনব। এটাই আমার জবাব।’ যা শুনে কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বঢরা বলেন, ‘অর্থনীতি নিয়ে রাজনীতি না করে অর্থমন্ত্রী মেনে নিন যে বৃদ্ধি শ্লথ হয়েছে।’ টুইটারে তিনি লেখেন, ‘তাদের তৈরি করা এই প্রবল সমস্যার কথা তারা যদি মানতেই না চায়, তা হলে তার সমাধানের পরিকল্পনা করবে কী করে?’