চাষি বলতেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে একজন মানুষ, যার সর্বাঙ্গে কাদা মাখা, ক্ষেতের মধ্যেই লাঙল চালিয়ে চাষ করছেন। মাঝেমধ্যে ক্ষেতের পাশে আলপথেই বসে জিরিয়ে নিচ্ছেন। কিন্তু দিল্লীতেই এমনই একজন কৃষক আছেন, যার গায়ে টি-শার্ট, ট্রাউজার আর পায়ে স্নিকার পরে তিনি চাষ করেন। এক ঝটকায় দেখলে তাঁকে মোটেই চাষির আওতায় ফেলা যায় না। কিন্তু বাস্তবে তিনি চাষিই। ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে পাওয়া চাকরি ছেড়ে চাষ করে তিনি রোজ ৪০ হাজার টাকা আয় করছেন। তাঁর নাম অভিষেক ধাম্মা।
দিল্লির পাল্লা গ্রামে জন্ম অভিষেকের। তাঁর বাবাও ছিলেন একজন চাষি। পারিবারিক ২৫ একর জমিতে তিনি চাষ করতেন। কিন্তু অভিষেকের স্বপ্ন অন্য ছিল। ছোট থেকেই তিনি চাষবাসের বিরোধী ছিলেন। ২০১৪ সালে ইলেক্ট্রনিক্স অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা শেষ করেন। অভিষেকের বাড়িতে চাষবাসের চল রয়েছে। কিন্তু ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে চাষ! একেবারেই পছন্দ ছিল না তাঁর। তাঁর কাছে চাষাবাদের অর্থ ছিল ঘণ্টার পর ঘণ্টার মাঠে রোদের মধ্যে পরিশ্রমের কাজ। এবং প্রচুর পরিশ্রমের বিনিময়ে যৎসামান্য কিছু অর্থ। কখনও তা আবার বিনিয়োগের থেকেও কম হতে পারে।
বাবার কৃষিকাজে কোনও সাহায্যই করবেন না, তা প্রথম থেকেই পরিবারকে ভাল ভাবে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন অভিষেক। নিজের চাকরি এবং ভবিষ্যত্ নিয়ে সমস্ত পরিকল্পনাও করে ফেলেছিলেন। কী এমন ঘটল যে অভিষেক চাষাবাদে কৌতূহলী হয়ে পড়লেন? এবং একজন চাষি হয়ে গেলেন? এর সূত্রপাত ২০১৪ সালে, স্নাতক হওয়ার ঠিক পড়েই।
চিরকালই নিজের স্বাস্থ্য সম্বন্ধে ভীষণ সচেতন অভিষেক জিম শুরু করার পর ক্রমে বুঝতে শুরু করেন, সুস্থ থাকার জন্য সঠিক পুষ্টির কতটা প্রয়োজন। তাঁর ডায়েট কী ভাবে স্বাস্থ্যকর হয়ে উঠবে, তা নিয়ে বিস্তর গবেষণা শুরু করে দেন। খাবারে কীটনাশকের মতো ক্ষতিকর রাসায়নিক এড়ানোর জন্য প্রথমে একটা ছোট বাগান করেন। যমুনা নদীর তীরে তাঁদের ছোট একটা জমি ছিল। ঠাকুরদা সেখামে মন্দির করে দিয়েছিলেন। নদীর তীরে হওয়ায় জমির উর্বরতাও খুব বেশি ছিল। নিজেদের চাষাবাদের বিশাল জমির দিকে না গিয়ে বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে সেই জমিতেই নিজের জন্য জৈব চাষ করতে শুরু করে দেন তিনি। কারণ সঠিক প্রশিক্ষণ বা অভিজ্ঞতা ছাড়া পারিবারিক ২৫ একর জমিতে জৈব চাষে ভরসা পারছিলেন না তিনি।
এক বছর পর যে ফলন তিনি পেলেন, তার সঙ্গে স্বাদে, রঙে বাজারে বিক্রি হওয়া ফসলের বিস্তর ফারাক নিজের চোখেই দেখতে পেলেন। সঙ্গে জৈব চাষের অভিজ্ঞতাও হল। এর পর তিনি পারিবারিক ২৫ একর জমিতে জৈব চাষ করা শুরু করলেন। বাড়িতে জৈব সার বানিয়ে ফসল ফলানো শুরু হল। রোজ ১৫-২০ মিনিট মাত্র লাগে গাছে জল দিতে তাঁর।
সম্পূর্ণ জৈবিক পদ্ধতিকে ফসল ফলিয়ে যাচ্ছেন দিল্লীর এই ইলেক্ট্রনিক্স অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ার। জমিতে বায়োগ্যাস প্ল্যান্টও লাগিয়েছেন। জমির সমস্ত বর্জ্য দিয়ে বায়োগ্যাস তৈরি করেন এবং সেই গ্যাসেই তাঁর নিজের বাড়িতে রান্না হয়। ইঞ্জিনিয়ার থেকে চাষি হয়ে কতটা সুফল পেলেন তিনি? এর উত্তরে অভিষেক বলেছেন, স্বাস্থ্য আর অর্থ দুটোই এক সঙ্গে পেয়েছেন তিনি। প্রতিদিন এখন ৪০ হাজার টাকা উপার্জন তাঁর। এত দিন যে পেশাকে এড়িয়ে চলতেন, এখন সেটাই তাঁর কাছে গর্বের, এমনই জানাচ্ছেন অভিষেক।