শনিবার সন্ধে নাগাদ আচমকাই ভূমিকম্পের মতো কেঁপে ওঠে কলকাতা পুরসভার ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের দুর্গা পিথুরি লেন। বড় বড় ফাটল ধরা পড়ল বউবাজার থানা এলাকার একাধিক বাড়িতে। ইতিমধ্যেই ভেঙে পড়েছে একাধিক বাড়ি। ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর ভূগর্ভস্থ অংশের কাজের জন্যই জন্যই এই বিপত্তি বলে অভিযোগ। মেট্রো কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে এই ঘটনার দায় স্বীকার করে নিয়েছে। আজ নতুন করে ফের ফাটল দেখা যায় বউবাজারে যার জেরে কাজ স্থগিত ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর। আজ সোমবার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে দিল্লি থেকে আসার কথা রয়েছে বিশেষজ্ঞ দলের। এছাড়া জার্মানি থেকেও বিশেষজ্ঞদের ডাকা হয়েছে। তাঁরা এসে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে রিপোর্ট দেবেন তাঁরা।
এই মুহূর্তে বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে কমপক্ষে ১৮টি বাড়ি। আজ সকালে দুর্গা পিথুরি লেন এবং স্যাকরাপাড়া লেনের পর হিদরাম ব্যানার্জী লেনে এবং গৌর দে লেনেও অন্তত ১০-১২টি বাড়িতে দেখা দিয়েছে ফাটল। বসে গিয়েছে বেশ কয়েকটি বাড়িও। আতঙ্ক ছড়িয়েছে এলাকায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমসিম খাচ্ছেন বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। পাশাপাশি তাঁদের অভিযোগ, মেট্রোর কাজের জন্য আগাম সতর্কবার্তা দেওয়া হয়নি। কোনও নোটিশ ছাড়ায় শুরু হয়েছে কাজ। এ বিষয়ে মুখ খোলেননি মেট্রোরেল আধিকারিকরা।
মেট্রো কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, টানেলে কাজ করার সময় একটি ওয়াটার পকেট ফেটে গিয়ে সুড়ঙ্গে জল ঢুকে গিয়েছিল। তাতেই শুরু হয় সমস্যা। যদিও মেট্রোর ইঞ্জিনিয়াররা জানিয়েছেন, টানেল খোঁড়ার ক্ষেত্রে অনেক সময়েই সুড়ঙ্গে জল ঢোকে। তবে সে সব ক্ষেত্রে সিমেন্ট দিয়ে জল আটকানো সম্ভব হয়। কিন্তু এ বার সমস্যা ছিল একটু বেশিই জটিল। সিমেন্ট দিয়ে জল আটকে জায়গা ভরাট করা সম্ভব হয়নি। উল্টে মেরামতির বদলে হু হু করে জল ঢুকে পড়ে টানেলে। তার জেরেই এই ফাটল দেখা দিয়েছে।
কিন্তু টানেল তৈরির আগে তো পরীক্ষানিরীক্ষা করেছিল মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ। তা সত্ত্বেও কেন এমন ঘটনা ঘটল, তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। যদিও নিয়ে কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, যে গভীরতায় টানেল খোঁড়া হয়েছিল, সেখানে জলস্তর ছিল না। ছিল ‘অ্যাকুইফার’। অর্থাৎ এখানে মাটি ও জল একসঙ্গে মিশে ছিল। জলের তোড়ে মাটি আলগা হয়ে এই বিপত্তি ঘটেছে। কিন্তু পরীক্ষার পরও কেন এই সমস্যা ধরা পড়েনি, তা তাঁরা ঘটনাটি খতিয়ে দেখছেন। দিল্লি থেকে ডাকা হয়েছে জিওফিজিওলজিস্টদের। তাঁরা এসে পরীক্ষা করে রিপোর্ট দেবেন। ইতিমধ্যেই তাঁরা টানেল বন্ধ করার কাজ শুরু করেছেন। টানেলের দুই প্রান্ত সিল করে দেওয়া হচ্ছে।