মোদী দিল্লীর মসনদে বসার আগে এক স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। এক নতুন ভারত হওয়ার স্বপ্ন। যেখানে জাতপাত খুবই তুচ্ছ ব্যাপার হবে। কিন্তু সেই স্বপ্ন আজও স্বপ্নই থেকে গেল। এখনো দেশে দলিতরা নিগৃহীত হয়। ছোঁয়া-ছুঁইয়ের সমীকরণ চলে। তবে সেই স্বপ্নের কারিগরের রাজ্যেই এই দলিত জাতির প্রতি এক অমানবিক কাজের নজির উঠে এল। এক দলিত শিক্ষকের জল পানের জন্য জন্য স্কুলে রাখা হল আলাদা একটা কলসি। যে স্কুলে শিক্ষা নিতে আসে খুদে পড়ুয়ারা, তাদের শিক্ষক দলিত বলে, তাঁর জন্য আলাদা একটা কলসি রাখা হয়েছে। আর ঘটনাটি খোদ মোদী রাজ্যে।
প্রসঙ্গত, গুজরাটের এক স্কুলে ৪৬ বছরের শিক্ষক কানহাইয়ালাল বারাইয়াকে একটি নোটিশ ধরানো হয়েছে। সে নোটিশ ধরিয়েছেন ওই স্কুলের উচ্চবর্ণের শিক্ষকরা। কারণ, বিদ্যালয়ের তিন উচ্চবর্ণের শিক্ষকের জন্য অন্য জায়গায় জল সংরক্ষণ করা হয়। আর সেখান থেকেই জল পান করে বড় ‘ভুল’ করে ফেলেছেন ৪৬ বছরের ওই দলিত শিক্ষক। আর সেটাই খুব কষ্টের কারণ হয়েছে ওই দলিত শিক্ষকের কাছে। তার জেরে এমনতর ভেদাভেদের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ করেন কানহাইয়ালাল নামের ওই শিক্ষক। আর তারপরেই ২৮ অগস্ট তাঁকে অন্যত্র আর একটি বিদ্যালয়ে বদলি করে দেওয়া হয়।
১৪ অগস্ট চোতিলা পুলিশ স্টেশনে অভিযোগ করেছিলেন কানহাইয়া। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মানসাং রাঠৌড়ের বিরুদ্ধে জাতপাত ভেদাভেদের অভিযোগ এনে পুলিশে দ্বারস্থ হয়েছিলেন কানহাইয়া। সঙ্গে তিনি এ-ও অভিযোগ করেছিলেন যে, দুই বছর আগে যেদিন তিনি স্কুলে জয়েন করেছিলেন, সেদিন থেকেই ছাত্রদের কাছে এই জাতের নামে বজ্জাতির বিষ ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। পুলিশের কাছে এফআইআরে কানহাইয়ালাল অভিযোগ করেছিলেন, ‘প্রধান শিক্ষক স্কুলে দুটি কলসির ব্যবস্থা করেছিলেন। যেহেতু আমি বাল্মিকী সম্প্রদায়ের, তাই আমার জন্য একটা কলসি আর বাকি তিন শিক্ষক কোলি প্যাটেল এবং দরবাদ সম্প্রদায়ের বলে তাঁদের জন্য আলাদা একটা কলসি।’ সঙ্গে এ-ও বলেন যে, ৩ জুলাই প্রধান শিক্ষক কানহাইয়ালালকে বলেছিলেন, ‘তুমি বাল্মিকী সম্প্রদায়ের। ওদের কলসি থেকে জল খাবে না।’ এই অসম ব্যবস্থাপনায় জেরবার গোটা দেশ। জাত-পাতের সমীকরণ আজ শিক্ষা প্রাঙ্গণেও তাড়া করে বেড়াচ্ছে।