ওরা বিদেশী। ওদের ডানায় ভর করে বর্ষা আসে। ঝাড়গ্রামে উড়ে আসা কয়েক হাজার পরিযায়ী পাখিকে ঘিরে এমনই বিশ্বাস জামবনির কেন্দুয়ার মানুষজনের। হাজারে হাজারে ওরা এবারও এসেছে। ওরা বলতে শামুকখোল, বালিহাঁস ইত্যাদি সব ভিনদেশী পাখিরা। তবে এখন পর্যন্ত যা জানা যায় অন্যান্য বছরের তুলনায় ওরা সংখ্যায় কম এসেছে।
ঝাড়গ্রাম শহর থেকে যে পিচ ঢালা কালো পথটা জামবনির দিকে চলে গেছে সেই পথের ধারেই পড়ে পরিযায়ী পাখিদের গ্রাম কেন্দুয়া। ঝাড়গ্রাম শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরত্ব। বাস রাস্তার পাশেই পর পর কয়েকটি তেঁতুল গাছ। তেঁতুল গাছের পাশ থেকে বিস্তৃত রয়েছে জলা জমি। তেঁতুল গাছের ডালে ছড়িয়ে ছিটিয়ে কাঠি, পাতা, খড় দিয়ে করেছে নিজেদের ছোট ছোট বাসা। ভিনদেশ থেকে এসে ঘরসংসার নিয়ে বসেছে ওরা। যার ঘরের আঙ্গিনায় এই তেঁতুল গাছ তার নাম বিধান মাহাতো। শুধু বিধান মাহাতো নন এই কেন্দুয়া গ্রামের মানুষজন পরিযায়ী পাখিদের ওপর কোনও রকম অত্যাচার করতে দেন না। গ্রামবাসীরা নিজেরা চোখে চোখে রাখেন গ্রামের এই বিশেষ অতিথিদের। পালাকরে ওরা পাহারা দেন। জলাভূমিতে পাখিদের খাদ্য শামুক, কেঁচো, পোকামাকড় ইত্যাদি নিয়ে এসে ছেড়ে দেয় গ্রামবাসীরা। এবার হাজার খানেক পরিযায়ী পাখি এসেছে, সাথে বয়ে নিয়ে এসেছে বর্ষা। এরা এখানে ডিম পাড়ে। বাচ্চা হয়। সংসার বড় করে ফের কার্তিকের শেষে উড়ে যায়। তবে এবার ভিনদেশী অতিথিরা সংখ্যায় কম আসায় মন খারাপ কেন্দুয়ার মানুষজনের। তাঁরা চান এই পরিযায়ীদের জন্য বনবিভাগ আরও কিছু ব্যবস্থা নিক।
ঝাড়গ্রামের ডিএফও বাসবরাজ হোলেইচ্চি বলেন, ‘ওই সব পরিযায়ী পাখিদের নজরে রাখবেন বনকর্মী ও বনরক্ষা কমিটির সদস্যরা। যাতে তাদের কেউ বিরক্ত না করে।’ এদিকে এবছর এখনও গোপীবল্লভপুরের পর্যটনকেন্দ্র ঝিল্লি পখিরালয়ে পরিযায়ী পাখির সেভাবে না নামায় বেশ চিন্তায় পর্যটন কেন্দ্রের দেখভালের দায়িত্বে থাকা স্বসহায়ক দলের সদস্য ও স্থানীয় মানুষজন। ঝিল্লি লেকের উড়িষ্যা ঘেঁষা জল জঙ্গলে প্রায় চারশো সরাল হাঁস ঘুরে বেড়াচ্ছে। ওরা ঝোপের মধ্যে ডিম পেড়েছে। পরিযায়ী পাখির দল এখনও আসেনি বলে জানান ওই পর্যটন কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা স্বসহায়ক দলের দলনেতা কারু মুর্মু।