স্বপ্না বর্মন। রাজ্যের সোনার মেয়ে। ২৯ শে আগস্ট তাঁর স্বপ্নের অর্জুন পুরস্কার জিতেছেন। আর তারপর সেই পুরস্কার নিয়ে দিল্লি থেকে কলকাতার সাই হোস্টেলে তিনি ফিরলেন নীরবে, নিঃশব্দে। এয়ারপোর্টে এই ‘সোনার’ মেয়ের জন্য ছিল না কোনো সম্মাননা, কোনো সংবর্ধনা। রাজ্য অ্যাথলেটিক্স সংস্থার কর্তারা তো বটেই, সাইয়ের কোনও প্রতিনিধিকেও দেখা যায়নি সেখানে। ভাড়ার ট্যাক্সি চেপেই এয়ারপোর্ট থেকে সল্টলেকের সাই হোস্টেলে ফিরে এলেন তিনি। রাষ্ট্রপতি ভবনে ছাত্রীর গৌরবের দিনে সাক্ষী ছিলেন কোচ সুভাষ সরকার। তিনিই নামিয়ে দিয়ে গেলেন সাইতে।
শুক্রবার সকালে ইস্টবেঙ্গল টিম যখন আলেহান্দ্রো মেনেন্দেসের তত্ত্বাবধানে সাইয়ের মাঠে ডার্বির প্রস্তুতিতে অনুশীলনে মগ্ন, তখন নিজের হস্টেলের ঘরে চুপচাপ চলে যান স্বপ্না। ভোরে উঠে ফ্লাইট ধরেছিলেন বলে ঘরে ঢুকেই ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। আর তারপর বিকেলেই নেমে পড়লেন অনুশীলনে। অন্য আর পাঁচটা দিনের মতোই। কেউ তাঁকে অভিনন্দন জানাতে বিমানবন্দরে না যাওয়াতেও অবাক নন জলপাইগুড়ির মেয়ে। বলছিলেন, ‘‘ওঁরা হয়তো জানতেন না আমি ফিরছি। এটা নিয়ে কোনও বিতর্ক হোক চাই না।
আর সংবর্ধনা? এর উত্তরে তিনি জানান, ফুল-মালা তো অনেক পেয়েছি। আর কি দরকার? অর্জুন পুরস্কারটা পেয়েছি, এটাই তো আমার ভাগ্য। ক’জন পায় এই সম্মান। ঘরে ঠাকুর যেখানে থাকে, সেখানে রেখে দিয়েছি এই পুরস্কারটা।’’ কিন্তু তা বলে ভাড়ার ট্যাক্সি চড়ে ফিরতে হল? ‘‘প্রতিবারই পদক জিতে ট্যাক্সি করেই ফিরি। ওটা নতুন কিছু নয়। দুর্ঘটনার ভয়ে গাড়ি কিনিনি। তবে ভাবছি একটা স্কুটি কিনব।’’
গত বছর তাঁর নাম থাকা সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত অর্জুন হতে পারেননি। হিমা দাশ পেয়েছিলেন সেই সম্মান। তাতে অবশ্য অখুশি নন জার্কাতা এশিয়াডে সোনা জয়ী মেয়ে। উচ্ছ্বসিত স্বপ্না বলছিলেন, ‘‘জানেন কাকতালীয় ভাবে একটা দারুণ ঘটনা ঘটে গিয়েছে। আমি জার্কাতায় সোনা জিতেছিলাম ২০১৮ সালের ২৯ অগস্ট। আর রাষ্ট্রপতি ভবনে গিয়ে অর্জুন পুরস্কার যেদিন নিলাম, তারিখটা ২০১৯ সালের ২৯ অগস্ট। ক্রীড়াদিবস ছিল দুটো দিনই।’’ সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি ভবনে যাওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রীর ‘ফ্রিক ইন্ডিয়া মুভমেন্ট’ অনুষ্ঠানেও হাজির ছিলেন। ‘‘জানেন, অর্জুনটা নেওয়ার সময় কেমন যেন মনটা করছিল। জলপাইগুড়ির গ্রাম থেকে রাষ্ট্রপতি ভবন, ভাগ্যে না থাকলে এটা কখনো হয় নাকি!’’ আবেগে ভাসেন স্বপ্না। তিনি জানালেন, ‘‘জার্কাতার সোনা ছিল কাঙ্ক্ষিত আর অর্জুন পুরস্কারটা ছিল স্বপ্ন।’’