অনুশীলন শেষ হওয়ার পর বরফ গলা ঠান্ডা জলে গলা শরীর ডুবিয়ে বসে ছিলেন বাগান ফুটবলাররা। তার মাঝেই পরস্পরের গায়ে বরফ শীতল জল ছিটিয়ে মজায় মেতেছিলেন চামোরো ও চুলোভা। সাজঘর গমগম করছিল সাউন্ড সিস্টেমের স্প্যানিশ ও ইংরেজি গানের সুরে। মোহনবাগান শিবিরের এই খোলামেলা মেজাজটাই বলে দিচ্ছে, রবিবারের ডার্বির আগে ফুটবলারদের শরীরী ভাষায় চাপের নামগন্ধ নেই। ডার্বির আগে স্বাভাবিক থাকার এই মন্ত্রটা দিয়েছেন বাগানের ‘হেডমাস্টার’ কিবু ভিকুনা। একইসঙ্গে অনুশাসনে ফুটবলারদের এক সুতোয় বেঁধেও রেখেছেন। ৯০ মিনিট দৌড়নো বজায় রাখতে ভিকুনা পাসিং ফুটবলের পাশাপাশি জোর দিচ্ছেন ফিটনেস ট্রেনিংয়ে। ভাল শুরু করেও ডুরান্ড ফাইনালের শেষদিকে ফুটবলারদের দাঁড়িয়ে পড়া তাঁর নজর এড়ায়নি।
দলে অল্পবিস্তর চোট ও অসুস্থতার সমস্যা রয়েছে। দুই গোলকিপার শঙ্কর ও দিব্যেন্দু জ্বর ও পেটের গন্ডগোলের জন্য আসেননি। ধনচন্দ্রর জ্বর। তিনি অনুশীলনে এসেও চলে যান। স্টপার ফ্রান মোরান্তে ও উইংহাফ নওরেমের পেশিতে হালকা টান থাকায় অল্প অনুশীলন করেই উঠে যান। ফ্রান গঞ্জালেসের হাঁটুতে আঘাত। তাই হালকা দৌড়ে হাঁটুতে বরফ বেঁধে বসে থাকেন। তবে এসবে উদ্বিগ্ন নন ভিকুনা। কারণ তাঁর হাতে বিকল্প আছে।
মোরান্তে ও গঞ্জালেস আত্মবিশ্বাসী সুরে বলে গেলেন, তাঁরা ফিট আছেন। ডার্বির জন্য একেবারে তৈরি। অনূর্ধ্ব ১৭ বিশ্বকাপে খেলা মণিপুরের নওরেমও জানালেন, ডার্বি খেলতে মুখিয়ে। বলেন, ‘মোহনবাগান জার্সিতে ও ডার্বিতে খেলা স্বপ্ন ছিল। কোচ সুযোগ দিলে স্বপ্ন পূরণ হবে। কলকাতা ডার্বির কথা শুনেছি ছেলেবেলা থেকে। তাই প্রথম ডার্বির আগে স্বাভাবিকভাবেই রোমাঞ্চিত। প্রচুর সমর্থকের সামনে সেরা দিতে হবে, জিততে হবে ভেবে কিছুটা চাপে। অবশ্য কোচ বলেছেন, ফলের কথা না ভেবে ভাল খেলায় মনঃসংযোগ করতে।’
ইস্টবেঙ্গল শিবিরও জানে ডার্বিতে কোচ ভিকুনার তুরুপের তাস জোসেবা বেইতিয়া। এদিনও দু ঘণ্টার অনুশীলনে দলের মুভ তৈরিতে বৈচিত্র্য আনতে স্প্যানিশ মিডফিল্ডারকে নানাভাবে ব্যবহার করলেন কোচ। তাঁর ওপরেই যে দলের সাফল্য নির্ভর করছে, এটা বেশ বুঝতে পারছেন জোসেবা। অনুশীলনের মাঝে তাঁকে দেখা গেল মাঠের ধারে এসে গঞ্জালেসের সঙ্গে খেলার ধরন নিয়ে গুরুগম্ভীর আলোচনা সারতে। তবে ডার্বি নিয়ে তাঁর কাছে প্রশ্ন রাখতেই জোসেবা হেসে বললেন, ‘শুধু আমি নয়, গোটা দলটাই ডার্বির জন্য তৈরি। ডার্বি আমার কাছে আর পাঁচটা ম্যাচের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। এর আগে স্পেনে রিয়েল সোসিয়েদাদের হয়ে অ্যাটলেটিকো বিলবাওয়ের বিরুদ্ধে ডার্বি খেলেছি সান মেমেস ও আনেওতা স্টেডিয়ামে। জিতেওছি। এখানেও জেতার লক্ষ্যে ঝাঁপাব চাপমুক্ত মেজাজে।’
অনেকে বলছে, রবিবারের ম্যাচ মোহনবাগানের সঙ্গে ইস্টবেঙ্গলের কোলাডোর ডুয়েল। এই কথা শুনে আগের মতোই মুখে হাসি ধরে রেখে বললেন, ‘আমি এসব নিয়ে একেবারেই ভাবছি না। আমাদের লড়াই কোনও একজন, দুজনের বিরুদ্ধে নয়, প্রতিপক্ষ গোটা দলের বিরুদ্ধে। তবে ইস্টবেঙ্গল নয়, নিজের দলের ভাল খেলাতেই মন দিচ্ছি আমি।’