আগামীকাল প্রকাশিত হচ্ছে আসামের এনআরসি তালিকা। ৩৩টি জেলার মধ্যে ১৪টিকে ইতিমধ্যেই স্পর্শকাতর বলে ঘোষণা করা হয়েছে। চারিদিকে শুধু ভারী বুটের শব্দ। এনআরসি-র তালিকা প্রকাশের পর কোনও রকম প্রতিবাদ বরদাস্ত করা হবে না। সাফ জানিয়ে দিয়েছেন বিজেপি শাসিত রাজ্যটির পুলিশ কর্তারা। ইতিমধ্যেই অতিরিক্ত ১৪৫ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। নজরদারি চলছে সামাজিক গণমাধ্যমেও। আড়াই হাজার এনআরসি সেবাকেন্দ্রকে মুড়ে ফেলা হয়েছে নিরাপত্তার চাদরে। চলছে টহলদারি। সর্বত্রই সতর্ক পুলিশ ও জেলা প্রশাসন।
সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে ২০১৩ সালে শুরু হয় অসমের এনআরসি প্রক্রিয়া। ১২২০ কোটি টাকা খরচ করে ২৫০০ সেবাকেন্দ্রের ৫২ হাজার সরকারি কর্মী এই তালিকা প্রস্তুত করেছেন। অসমের ৩ কোটি ২৯ লাখ ৯১ হাজার ৩৮৪ আবেদনের ভিত্তিতে চূড়ান্ত খসড়ায় ঠাঁই হয় ২ কোটি ৮৯ লাখ ৮৩ হাজার ৬৭৭ মানুষের। চূড়ান্ত খসড়ায় বাতিল হয় ৪০ লাখ ৭ হাজার ৭০৭ নাম। পরে অতিরিক্ত খসড়ায় আরও বাতিল হয় ১ লাখ ২ হাজার ৪৬৫ জনের নাম। বাদ পড়া বেশির ভাগই বাঙালি। এখন দেখার চূড়ান্ত তালিকায় কত নাম বাদ পড়ে।
জনগণকে অযথা আতঙ্কিত না হওয়ার কথা বলা হলেও মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে নেওয়া হয়েছে বাড়তি সতর্কতা। অভিযোগ উঠেছে, সরকার নিজেই ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করেছে আসামে। আতঙ্কে ফের এক ব্যক্তি আত্মহত্যা করেন। পাশাপাশি স্পর্শকাতর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হতে পারে। আসাম পুলিশের ট্যুইটারে লেখা হয়েছে, মানুষের নিরাপত্তা দিতে সবরকম ব্যবস্থা করবে প্রশাসন। তবে কোনওপ্রকার গুজবে কান না দেওয়ার জন্য জনসাধারণকে সতর্ক করা হচ্ছে। আসাম পুলিশের ডিজিপি কুলধর সাইকিয়া বলেন, “৩১ আগস্ট এনআরসির চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হবে। ওইদিন রাজ্যজুড়ে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সমস্ত জেলার পুলিশ সুপারকে সব রকম ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে”।
মাঝে মাত্র একটি দিন। তার আগে বৃহস্পতিবারও বেশ কয়েক জনকে ফের তথ্য যাচাইয়ের জন্য এনআরসি সেবা–কেন্দ্রে ডেকে পাঠানো হয়। বিশ্বনাথ জেলাতেই অন্তত ২০ জনকে ফের হাজিরা দেওয়ার জন্য ডাকার খবর পাওয়া গিয়েছে। আর এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সারা আসাম সংখ্যালঘু ছাত্র সংস্থা (আমসু)। এরই মধ্যে বুধবার গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করলেন করিমগঞ্জের সোনাইপাড়ার প্রীতিভূষণ দত্ত। তাঁর স্ত্রী নমিতা দত্তের নাম নেই এনারসি-র খসড়া তালিকায়। পারিবারিক সূত্রে খবর, বেশ কিছুদিন ধরেই হতাশায় ভুগছিলেন প্রীতিভূষণ। এনআরসি-র চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের দু-দিন আগে সেই হতাশা থেকেই আত্মহত্যার পথ বেছে নিলেন তিনি।