মোদী জমানায় আচ্ছে দিন এসেছে দেশের ঋণ খেলাপিদের। বরাবরই এই অভিযোগ করে এসেছে দেশের বিরোধীরা। এই অভিযোগ যে মোটেও ভ্রান্ত নয়, তার জলজ্যান্ত প্রমাণ গত বছর পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক থেকে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে দেশ ছাড়া হওয়া নীরব মোদী-মেহুল চোকসি এবং ৯ হাজার কোটি টাকার আর্থিক কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত বিজয় মালিয়া। এবার বিরোধীদের এই অভিযোগকে আরও কিছুটা মান্যতা দিল খোদ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের রিপোর্ট। গত অর্থবর্ষে দেশে এক ধাক্কায় ব্যাঙ্ক জালিয়াতি বেড়েছে ৭৪ শতাংশ। মোট জালিয়াতির অঙ্ক ৭১,৫৪৩ কোটি টাকা। এমনই চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট প্রকাশ করেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।
বৃহস্পতিবার রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বার্ষিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে ব্যাঙ্ক জালিয়াতি বেড়েছে ৭৪ শতাংশ। ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে জালিয়াতির অঙ্ক ছিল ৪১,১৬৭ কোটি টাকা। সিংহভাগই রাষ্ট্রয়াত্ত ব্যাঙ্ক এবং ঋণপ্রদানকারী সংস্থাগুলি এই জালিয়াতির শিকার হয়েছে। তবে, এই তালিকায় বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাঙ্কও রয়েছে বলে জানা গেছে। আরবিআই জানাচ্ছে, ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষের মোট জালিয়াতি অঙ্কের ০.৩ শতাংশ জালিয়াতি হয়েছে কার্ড ও ইন্টারনেট ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রে। ৭৩টি এমন কেস রয়েছে যেগুলি বড়সড় দুর্নীতি বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। এক লক্ষ টাকার নীচে জালিয়াতি মোট অঙ্কের ০.১ শতাংশ বলে জানাচ্ছে আরবিআই।
উল্লেখ্য, এর আগে ১১ বছরের জালিয়াতির হিসাব দিতে গিয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক জানিয়েছিল, ২০১৪–১৫ সালে দেশে ব্যাঙ্ক জালিয়াতির অঙ্ক ছিল ১৯ হাজার ৪৫৫ কোটি ৭ লক্ষ টাকা। ২০১৫–১৬ ও ২০১৬–১৭ সালে জালিয়াতির পরিমাণ দাঁড়ায় যথাক্রমে ১৮ হাজার ৬৯৮ কোটি ৮২ লক্ষ টাকা ও ২৩ হাজার ৯৩৩ কোটি ৮৫ লক্ষ টাকা। আর ২০১৭–১৮ সালে ব্যাঙ্ক জালিয়াতিতে উধাও হওয়া টাকার পরিমাণ আগের সব হিসাবকে ছাপিয়ে পৌঁছে যায় ৪১ হাজার ১৬৭ কোটি ৩ লক্ষ টাকায়। অর্থাৎ, প্রথম মোদী সরকারের শেষ চার বছরে ব্যাঙ্ক জালিয়াতির দরুন উধাও হয় ৮৩ হাজার ৭৯৯ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা। সবমিলিয়ে বলা যায়, মোদী জমানায় এখন ব্যাঙ্ক ‘জালিয়াত’দের ‘রামরাজ্যে’ পরিণত হয়েছে দেশ।