সরষের মধ্যেই ভূত। বিচার ব্যবস্থার মধ্যেই রয়েছে দুর্নীতি। এমনই অভিযোগ পাটনা হাইকোর্টের প্রবীণতম বিচারপতি রাকেশ কুমারের। বলেছিলেন, কী ভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করেন বিচারপতি থেকে শুরু করে বিচারব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত আধিকারিকরা। আর এই স্পষ্টবাদিতার’ফল’ পেলেন হাতেনাতে। পাটনা হাইকোর্টের প্রবীণতম বিচারপতির হাতে থাকা সব মামলা ও বিচারসংক্রান্ত কাজ প্রত্যাহারের নির্দেশ জারি করলেন পাটনা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি। পরবর্তী কাজ হাতে পেতে নিজের চেম্বারে গিয়ে অপেক্ষা করতে বলা হল বিচারপতি রাকেশ কুমারকে।
কিন্তু কেন বিচার ব্যবস্থার বিরুদ্ধে দুর্নীতি নিয়ে মুখ খুললেন বিচারপতি? রাকেশ কুমার নিজের এজলাসে শুনছিলেন প্রাক্তন আইএএস অফিসার কে পি রামাইয়ার জামিনের আবেদন। তখনই সুপ্রিম কোর্ট এবং হাইকোর্ট যেখানে জামিনের আবেদন খারিজ করেছে, সেখানে নিম্ন আদালত কী ভাবে রামাইয়ার জামিন মঞ্জুর করল, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। সেই প্রসঙ্গেই বলেন, ‘হাইকোর্টে দুর্নীতি তো ওপেন সিক্রেট। বিচারপতি হিসেবে পদোন্নতির পর দেখলাম প্রবীণ বিচারপতিরা প্রধান বিচারপতিকে তৈলমর্দন করছেন। প্রথমে ভাবতাম, এর কারণ কী, কিছুদিন পর বুঝলাম এই মোসাহেবির কারণ নিজের পছন্দের বা সম্প্রদায়ের লোকের পদোন্নতির পথ মসৃণ করা।’
প্রবীণ বিচারপতির কথায়, ‘এই অফিসাররা হাইকোর্টের রক্ষাকবচ পেয়ে গেলেন। এ সব দেখে যদি আমি নীরব দর্শক হয়ে থাকি, নিজেই নিজেকে ক্ষমা করতে পারব না।’ এই প্রসঙ্গে পশুখাদ্য কেলেঙ্কারির কথাও টেনে এনেছেন বিচারপতি কুমার। তাঁর বক্তব্য, ‘এলাহাবাদ হাইকোর্টের একজন প্রবীণ বিচারপতি পশুখাদ্য কেলেঙ্কারির সময় তাঁর স্ত্রীকে রাজ্যসভার সদস্যপদের জন্য মনোনীত করেছিলেন। এতেই শেষ নয়, এলাহাবাদ হাইকোর্টেরই এক বিচারপতি এমন এক অভিযুক্তকে জামিন দিয়ে দিয়েছিলেন, যাঁর জামিনের আবেদন পড়েছিল বিচারপতি অখিলেশ চন্দ্রের চেম্বারে। হাইকোর্টের এই দুর্নীতি তো ওপেন সিক্রেট।’
এই রায়ের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নেমে আসে খাঁড়া। পাটনা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রশাসনিক নির্দেশ জারি করে বিচারপতি কুমারের হাত থেকে সব মামলা তুলে নেন।
বৃহস্পতিবার প্রশাসনিক নির্দেশ জারি করেন, পরবর্তী নির্দেশ না পাওয়া অবধি বিচারপতি কুমারকে নিজের চেম্বারে পরবর্তী কাজের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
অনুমান, বিচার ব্যবস্থার দুর্নীতি নিয়ে সরব হওয়াতেই শাস্তির কোপে পড়তে হল বিচারপতি রাকেশ কুমারকে। বিহারের অ্যাডভোকেট জেনারেল জানিয়েছেন, ১১ জন বিচারপতির বেঞ্চ এই নির্দেশও দিয়েছেন যে বিচারপতি কুমারের রায় কোথাও জানানো হবে না। এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে তা স্থির করবেন প্রধান বিচারপতিই।