কেন্দ্রীয় বাজেট পেশের পরই বসে গিয়েছিল গাড়ি ব্যবসার চাকা। আর গাড়ি বিক্রিতে ধস নামার ফলে বিপাকে যন্ত্রাংশ উৎপাদনকারী সংস্থাগুলিও। অবস্থা এতটাই গুরুতর যে, ইতিমধ্যেই কাজ হারিয়েছেন ৩ লক্ষ কর্মী। যার মধ্যে মারুতি সুজুকি থেকে বাদ পড়েছেন ৩০০০ কর্মী। এবার উৎপাদনে কাটছাঁট ও কর্মী ছাঁটাইয়ের পথে হাঁটতে চলেছে জাপানি গাড়ি নির্মাতা সংস্থা ‘টয়োটা মোটরস’ ও দক্ষিণ কোরিয়ার সংস্থা ‘হুন্ডাই মোটরস’ও। সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানাচ্ছে, যা পরিস্থিতি, তাতে উৎপাদনে ব্যাপক কাটছাঁট ও কর্মী ছাঁটাইয়ের পথ নেওয়া ছাড়া দু’টি সংস্থার সামনেই আর কোনও রাস্তা খোলা নেই।
প্রসঙ্গত, যত দিন যাচ্ছে, ভারতে ততই নাভিশ্বাস উঠছে গাড়ি শিল্পের। আর্থিক বৃদ্ধির গতি শ্লথ থেকে শ্লথতর হয়ে পড়ায় গাড়িনির্মাতা সংস্থাগুলির কপালে ভাঁজ বাড়তে শুরু করেছে। মূলত, মানুষের হাতে নগদ টাকা এবং চাকরির নিশ্চয়তা না থাকায় বিক্রি হচ্ছে না গাড়ি। ফলে গাড়িনির্মাতা সংস্থাগুলির গুদামে অবিক্রিত গাড়ি জমতে জমতে পাহাড় হয়ে গিয়েছে। গত জুলাই পর্যন্ত ভারতে এই অবস্থা চলছে টানা ৯ মাস ধরে। এরই মধ্যে গাড়ি প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলির সংগঠন সিয়ামের প্রকাশ করা জুলাইয়ের বিক্রির পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, জুলাইতে গত ১৯ বছরের সব থেকে কম বিক্রি দেখেছে ভারতের গাড়ি শিল্প ক্ষেত্র।
এর ফলে, শুধু গাড়ি উৎপাদনেই ব্যাপক কাটছাঁট করা নয়, কর্মী সঙ্কোচনের পথেও যেতে হচ্ছে গাড়িনির্মাতা সংস্থাগুলিকে। খবর, এই পরিস্থিতিতে টয়োটা ও হুন্ডাইয়ের মতো নামজাদা গাড়ি নির্মাতা সংস্থাগুলিও সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাদের বেশ কয়েকটি কারখানায় তারা উৎপাদনে ব্যাপক কাটছাঁট করবে। সেই মর্মে ওই দু’টি সংস্থার কর্তৃপক্ষ কর্মচারীদের কাছে একটি জরুরি বিজ্ঞপ্তিও পাঠিয়েছেন। দু’টি সংস্থারই যাত্রীবাহী যানের বিক্রি জুলাইয়ে যে হারে পড়েছে, গত দু’দশকে সেই ভাবে কমেনি।
উল্লেখ্য, সিয়ামের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জুলাইয়ে যাত্রীবাহী ও দু’চাকার গাড়ি সমেত সমস্ত ধরনের ১৮,২৫,১৪৮টি গাড়ি বিক্রি হয়েছে। গত বছরের জুলাইয়ে এই সংখ্যাটাই ২২,৪৫,২২৩ ছিল। এর আগে ২০০০ সালের ডিসেম্বরে ঘরোয়া বাজারে গাড়ির বিক্রি ২১.৮১ শতাংশ কমে গিয়েছিল। চলতি বছরের জুলাইয়ে সার্বিক গাড়ি বিক্রি কমলেও সব থেকে বেশি মার খেয়েছে যাত্রিবাহী গাড়ির বিক্রি। গত মাসে যাত্রীবাহী গাড়ির বিক্রিও ১৯ বছরের সর্বনিম্ন মাত্রায় পৌঁছেছে। জুলাইয়ে যাত্রীবাহী শোরুমগুলিতে গাড়ির বিক্রি ৩০.৯৮ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
তার আগে ২০০০ সালের ডিসেম্বরে যাত্রীবাহী গাড়ির বিক্রি সব থেকে খারাপ হয়েছিল। ১৯৯৯ সালের ডিসেম্বরের তুলনায় বিপণিগুলিতে যাত্রীবাহী গাড়ির বিক্রি ৩৫.২২ শতাংশ কমে গিয়েছিল। সার্বিক ভাবেও ওই বছর ডিসেম্বরে যাত্রীবাহী গাড়ির বিক্রি ৩৯.৮৬ শতাংশ কমে গিয়েছিল। গত মাসে যাত্রীবাহী গাড়ির সার্বিক বিক্রি ৩৫.৯৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। জুলাই নিয়ে টানা ন’মাস ঘরোয়া বাজারে যাত্রিবাহী গাড়ির বিক্রি কমল। যাত্রীবাহী গাড়ি ছাড়াও গত মাসে দু’চাকার বিক্রিও ২০১৮-র জুলাইয়ের তুলনায় ১৬.৮২ শতাংশ কমেছে।