কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বাতিলের পর থেকেই সংবাদপত্র প্রকাশ এবং বিলিতে বাধা, অযৌক্তিক কারণে সাংবাদিকদের গ্রেফতার লেগেই রয়েছে- এই অভিযোগে সরব হয়েছিল সেখানকার বহুল প্রচারিত, সবচেয়ে পুরোনো প্রথম সারির দৈনিক ‘কাশ্মীর টাইমস’। তারপরই সংবাদপত্রের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার আর্জি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন সংবাদপত্রটির কার্যনির্বাহী সম্পাদক অনুরাধা ভাসিন। এবার তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতেই কাশ্মীরে সংবাদমাধ্যমের ওপরে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে কেন্দ্র ও জম্মু-কাশ্মীর সরকারের জবাব চাইল সুপ্রিম কোর্ট।
প্রসঙ্গত, সুপ্রিম কোর্টে মামলাকারী অনুরাধা ভাসিনের অভিযোগ ছিল, ‘ইরফান মালিক নামে এক সাংবাদিককে শুধুমাত্র এই কারণে গ্রেফতার করা হয়েছে যে, তিনি সরকারের পদক্ষেপ নিয়ে খবর করেন না। স্বাধীন দেশে এ কেমন যুক্তি! কোন আইনে এমনটা হয়? একজন সাংবাদিক কী খবর করবেন, সেটা সরকার বলে দিতে পারে না।’ অন্য এক ঘটনার উল্লেখ করে তিনি এ-ও বলেছিলেন, ‘বুরহান ওয়ানির নেটওয়ার্ক নিয়ে তদন্তমূলক বিস্তারিত প্রতিবেদন লেখার জন্য ত্রাল থেকে গ্রেটার কাশ্মীর পত্রিকার এক সাংবাদিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। বলা হচ্ছে, বুরহান ওয়ানির সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক ছিল!’
ভাসিনের মতে, ওই সাংবাদিক তথ্যসমৃদ্ধ যে প্রতিবেদন লিখেছেন তা সাধারণ মানুষ, গবেষক, সাংবাদিক এমনকী নিরাপত্তা সংস্থারও কাজে আসতে পারে। তাঁকে পুরস্কৃত করার পরিবর্তে গ্রেফতার করার অর্থ সংবাদমাধ্যমের গলায় লাগাম পরানো। অতীতের কোনও ঘটনার সঙ্গে তিনি যে বর্তমান পরিস্থিতিকে মেলাতে পারছেন না, সে কথাও স্পষ্ট করে দিয়ে ভাসিন জানিয়েছিলেন, ‘২০১০, ২০১৩, ২০১৬ সালে জম্মু–কাশ্মীরে কার্ফু জারি হয়েছিল। কিন্তু, সংবাদপত্র বন্ধ করা হয়নি। সংবাদপত্রের প্রচারে সরকারি বাধা আসেনি। এবার যা ঘটছে তা নজিরবিহীন। সংবাদমাধ্যম তথা গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভের ওপর আঘাত।’
তাঁর কথায়, ‘বাড়ি থেকে দফতরে যাওয়ার পথে বহুবার তল্লাশির মুখোমুখি হতে হচ্ছে। টেলিফোন, মোবাইল, ইন্টারনেট, সব বন্ধ। তার ওপর সাংবাদিক ও প্রতিনিধিদের কোথাও যেতে দেওয়া হচ্ছে না। তা হলে সংবাদ সংগ্রহ হবে কীভাবে? এতকিছুর পরেও সংবাদ সংগ্রহ করে তা প্রকাশ করা হলেও তা বিলি করতে দেওয়া হচ্ছে না।’ এ নিয়েই এবার শীর্ষ আদালতে অনুরাধার আইনজীবী বৃন্দা গ্রোভার বলেন, ‘২৪ দিন ধরে কাশ্মীর থেকে কার্যত কোনও তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না।’ আর এ হেন অভিযোগ পাওয়ার পরই এক সপ্তাহের মধ্যে কেন্দ্র ও জম্মু-কাশ্মীর সরকারকে জবাব দিতে বলেছে শীর্ষ আদালত।